প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মিয়ানমারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা চায় জাতিসংঘ

মিয়ানমারে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির ক্ষমতায় বসে মিন অং হ্লাইং নেতৃত্বাধীন সামরিক কর্তৃপক্ষ। এরপরই মিয়ানমারজুড়ে শুরু হয় সামরিক প্রশাসনবিরোধী বিক্ষোভ। আর সে বিক্ষোভ ঠেকাতে কঠোরপন্থা অবলম্বন করে সামরিক জান্তা।

সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার কারণে দেশটির পরিস্থিতি এখন ভয়ংকর পর্যায়ে চলে গেছে এবং মিয়ানমার জান্তা পুরো জাতিকে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের থামাতে কঠোর নিষেধাজ্ঞার কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ। অ্যান্ড্রুজ বলেন, মিয়ানমারে যা ঘটছে তার প্রতি বিশ্বের মনোযোগ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক বাহিনী প্রায়ই আক্রমণ করছে। তারা ইন্টারনেট অ্যাক্সেস বা যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করে দিচ্ছে। অনেক সাংবাদিককে আটক করে কারাগারে রাখা হয়েছে।

মিয়ানমারে কী ঘটছে তা জানা বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এই দূত বলেন, আপনি যদি মিয়ানমারে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া ভয়াবহতার ধারণা পেতে চান, তাহলে সম্প্রতি দেশটির সাগাইং অঞ্চলের একটি স্কুলে হামলার ঘটনার দিকে তাকান। স্কুলটিতে হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয়েছে। এরপর হেলিকপ্টার থেকে নেমে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। এমনকি লাশগুলোও তুলে নিয়ে গেছে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। অর্থাৎ বাবা-মায়ের কাছে তাদের সন্তানদের লাশগুলো পর্যন্ত হস্তান্তর করা হয়নি। মিয়ানমারে প্রতিদিন এসবই ঘটছে।

মিয়ানমারের জনগণের সহায়তায় এগিয়ে আসা বিশ্বের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত বলেন, এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যা বাস্তবসম্মত ও অর্জনযোগ্য। যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হলে আক্ষরিক অর্থেই অগণিত মানুষের জীবন বাঁচবে। প্রতিবার আমি মানবাধিকার কাউন্সিলে জমা দেয়া রিপোর্টে উল্লেখ করি, মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ক্ষেত্রে তাদের ‘অকার্যকর’ এবং ‘নিষ্ক্রিয় অবস্থান’ থেকে সরে না আসা পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। সহিংসতা মিয়ানমারের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। আমার কাজ হলো, যারা এ বিষয়ে ‘কিছু করার’ মতো অবস্থানে আছেন, তাদের তথ্য-বিশ্লেষণ এবং সুপারিশ প্রদান করা।

মিয়ানমার জান্তাকে কারা সহায়তা করছে এবং দেশটির চলমান পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য কী করা যেতে পারে? সাংবাদিক এমন প্রশ্নের জবাবে টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, নামগুলো সবারই জানা। যেসব দেশ মিয়ানমারের জনগণের সমর্থনে কথা বলেছে, সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে; সেসব দেশের নাম সবাই জানে। কিন্তু সমস্যা হলো এই দেশগুলো কাজ করছে না, তাদের কথার সঙ্গে কাজের মিল নেই।

মিয়ানমার জান্তা নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে উল্লেখ করে টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, এটা কোনো নির্বাচন হবে না, এটা একটা জালিয়াতি। ফলে খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রযুক্তিগত সহায়তা বা কোনো ধরনের পরামর্শ দিয়ে দেশগুলো যেন সেই জালিয়াতিকে সমর্থন করতে জান্তার ফাঁদে না পড়ে। বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ করে আমি আমার কর্মজীবনের একটি বড় অংশ কাটিয়েছি নির্বাচনে অংশগ্রহণ অথবা প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়ে এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে। তাই আমি বলতে পারি মিয়ানমারে নির্বাচন হবে না, এটি হবে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে জান্তা সরকারের জালিয়াতির অংশ।

মিয়ানমারে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, এর কী ধরনের প্রমাণ আছে বা জান্তা আর কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, তারা অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। তারা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি জনসংখ্যার এ দেশটিকে কার্যত জিম্মি করে রেখেছে। কোনো সরকারি সত্তা হিসেবে নয়, তাদের একটি ‘অপরাধী দল’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে, যারা আক্ষরিক অর্থেই দেশটি দখল করেছে।

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার মতে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জিম্মি কিংবা গ্রেপ্তার করে এবং মৃত্যুদণ্ড দিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব। জান্তা সরকার বৈধতা অর্জনের চেষ্টা করছে। ফলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো তাদের এই সাজানো নির্বাচন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকারকে হটিয়ে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে নেয় দেশটির সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ। আর সে বিক্ষোভ দমনে সামরিক বাহিনী একদিকে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, অন্যদিকে গণহারে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের। তবে এখনো রাশিয়া এবং চীনের মতো ক্ষমতাধর দেশের সমর্থন পেয়ে আসছে জান্তা সরকার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close