নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বাড়ছে ডেঙ্গু, এক দিনে হাসপাতালে ৪৪০ জন

করোনাভাইরাস সংক্রমণ এখনো ঘটছে। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কাও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই অবস্থার মধ্যেই দেশে নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বর; রাজধানীতে দাপট দেখিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে জেলায় জেলায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না থাকায় ডেঙ্গু বাড়ছে ঢাকার বাইরে। এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরো ৪৪০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে; যা চলতি বছরে সর্বোচ্চ। এতে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো ১৩ হাজার ৪৪০ জন। তবে এ সময় কারো মৃত্যু হয়নি। তাতে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫০ জনই থাকল।

শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে আরো ৪৪০ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় ৩২৫ ও ঢাকার বাইরে ১১৫ জন। বর্তমানে সারা দেশে ১ হাজার ৬২৮ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ২৭২, ঢাকার বাইরে ৩৫৬ জন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগী ১৩ হাজার ৪৪০ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ১০ হাজার ৪৩৪ ও ঢাকার বাইরে ৩ হাজার ৬ জন। একই সময় সারা দেশে ছাড়প্রাপ্ত রোগী ১১ হাজার ৭৬২ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ৯ হাজার ১৩৯ ও ঢাকার বাইরে ২ হাজার ৬২৩ জন। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ২৮ হাজার ২৬৫ জন ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১০৫ জন।

তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়, কেবল তাদেরই তথ্য আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। আক্রান্ত হয়েছে কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হয়নি, এমন ব্যক্তিরা সরকারের হিসাবের বাইরেই থেকে যায়।

শিশুদের আক্রান্তের হারও বাড়ছে : ঢাকার শ্যামলীতে শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে এখন ৪৫ জন শিশু চিকিৎসাধীন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৭ শিশু। আইসিইউতে রয়েছে ৪ জন। চলতি মাসে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে দুই শিশু।

ডেঙ্গুর লক্ষণ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তাহমিনা বেগম জানান, সাধারণভাবে ডেঙ্গু হলে শরীরে ১০১ থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা হতে পারে। এ সময় জ্বর একটানা হতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে আবারও জ্বর আসতে পারে। জ্বরের পাশাপাশি সারা শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে র‌্যাশ হতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তবে এসব লক্ষণ যেসব রোগীর থাকবে, তাও নয়। এসব লক্ষণ না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। লক্ষণ দেখা দিলে বা ডেঙ্গু সন্দেহ হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক রওশন খন্দকার জানান, এ বছর মে মাস থেকে ডেঙ্গু রোগী বাড়তে শুরু করেছে। শিশুদের জন্য আলাদা ডেঙ্গু কর্নার আছে, যেখানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হয়। তবে এবার রোগীদের ধরন বোঝা যাচ্ছে না। হঠাৎ করেই কারো কারো পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এবারের ডেঙ্গুতে জ্বর, বমি, র‌্যাশ এসব লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে চলে আসছে। পরীক্ষা করলেই ডেঙ্গু পজিটিভ আসছে।

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ে অতীতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা যেসব সুপারিশ করেছেন বা পরামর্শ দিয়েছেন, তার কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি। যদি বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও পরামর্শই বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ হবে কীভাবে? তাই যাদের এসব সুপারিশ ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। সেই সঙ্গে নাগরিক সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার বর্ষাকালীন মশা জরিপে দেখা গেছে, দুই সিটি মিলিয়ে রাজধানীর ১২ শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা আছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে পড়ে থাকা বা ফেলে রাখা ভেজা পাত্রে বা ওয়েট কনটেইনারে। যেমন পানি জমে থাকা ঘর বা ভবনের মেঝে, প্লাস্টিকের ড্রাম বা প্লাস্টিকের নানা ধরনের পাত্রে লার্ভা পাওয়া গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ শতাংশ এ ধরনের পাত্রে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২২ শতাংশ পাত্রে মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ফলে ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রাজধানীর ২৭টি ওয়ার্ড।

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ে গবেষণা করছেন জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, একটি জেলায় যদি সারা বছর পাঁচজন রোগী পাওয়া যায়, তাহলে ধরে নেওয়া যায় আক্রান্ত রোগী অন্য জেলা থেকে এসেছে। কিন্তু এর বেশি হলে ধরে নেওয়া যাবে ডেঙ্গু স্থানীয়ভাবে ছড়িয়েছে। আমরা শুধু সিটি করপোরেশন নিয়ে কথা বলছি। জাতীয় পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না। সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই রোগের জীবাণুুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ, রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সক্ষমতা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেই। তাই মশার লার্ভা নষ্ট করতে পারলেই ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে যায়। মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। ডেঙ্গুর মূল মৌসুমের চার মাস জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close