প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিক্ষোভে উত্তাল ইরান, সেনা নামানোর পরিকল্পনা

* পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা * বিক্ষোভের উদ্দেশ্যে রাস্তায় না নামার জন্য হুশিয়ারি * জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রত্যয়

পুলিশ হেফাজতে এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইরান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী নামানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। যাতে আর কোনো ধরনের বিক্ষোভ না হয় এবং বিক্ষোভের জন্য কেউ যাতে রাস্তায় নেমে না আসেন সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দেশের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তারা বিশৃঙ্খলাকারীদের মোকাবিলা করার জন্য নামবেন।

অনুপযুক্ত পোশাক পরার অপরাধে গত সপ্তাহে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর ২২ বছর বয়সি ইরানি তরুণী মাশা আমিনি পুলিশ হেফাজতে মারা যান। তার মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে ইরানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবারও (২৩ সেপ্টেম্বর) তেহরান ও অন্যান্য নগরীতে বিক্ষোভ হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এই বিক্ষোভ দমনে শুক্রবার সেনাবাহিনী এ হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, এ ধরনের বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে ইসলামি শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করার উদ্দেশে শত্রুদের কৌশলের অংশ। অন্যায়ভাবে আক্রমণের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও শান্তি নিশ্চিত করতে যেকোনো অপতৎপরতা কঠোরভাবে মোকাবিলা করা হবে। এদিকে বিক্ষোভের প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার সরকার সমর্থকরাও তেহরানে সমাবেশ করেন। ইরানি গণমাধ্যম জানায়, জুমার নামাজের পর সমাবেশে বক্তারা বলেন, তাদের এই জমায়েত হলো ‘দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে জনশক্তির আওয়াজ।’

মাশা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে সৃষ্ট অস্থিরতা ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ইরান সরকার। এর আগে ২০১৯ সালে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। সে বারের বিক্ষোভ-সহিংসতায় দেড় হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে।

পুলিশ হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে এবার বিক্ষোভে ক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা তেহরান ও আরো কয়েকটি শহরে যানবাহন এবং থানা পুড়িয়ে দিয়েছে; অনেক জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা হয়েছে। ইরানি গণমাধ্যম জানায়, পুলিশ ২৮০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আমিনির মৃত্যু নারীর পোশাক নিয়ে কঠোর বিধিনিষেধসহ ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ এবং নিষেধাজ্ঞায় ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইরানিদের ক্ষোভ উসকে দিয়েছে। আমিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে তেহরান গিয়েছিলেন। বিবিসি জানায়, হিজাব আইন ঠিকমতো না মানার অভিযোগে নীতি পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর ডিটেনশন সেন্টারে তিনি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান এবং কোমায় চলে যান।

মানবাধিকার বিষয়ে ইরানে জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেন, তারা জানতে পেড়েছেন নীতি পুলিশ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে মেরেছে এবং তাদের একটি গাড়ির সঙ্গে আমিনির মাথা জোরে ঠুকে দিয়েছে।

নীতি পুলিশের পক্ষ থেকে অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। তাদের দাবি, আমিনি ‘হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হন’। তবে আমিনির পরিবার বলেছে, সে একেবারেই সুস্থ এবং সবল ছিল।

ইরানের তথাকথিত নৈতিকতা রক্ষার দায়িত্বে থাকা নীতি পুলিশ বাহিনীর হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুর পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ইরানের নারীরা। ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির কঠোর পোশাকবিধি এবং তা বলবৎ করার দায়িত্বে যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠা নারীরা প্রতিবাদস্বরূপ তাদের হিজাব পুড়িয়ে ফেলছেন।

গাশ্ত-ই এরশাদ (আক্ষরিক অনুবাদণ্ডনির্দেশ টহলদার) নামের এই বিশেষ পুলিশ বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মানুষ যাতে ইসলামি আদর্শ ও নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় সেটা নিশ্চিত করার এবং কেউ ‘অনৈতিক’ পোশাক পড়েছে মনে হলে তাকে আটক করার। ইরানে প্রচলিত শরিয়া আইন অনুযায়ী নারীদের হিজাব পরা বা চাদর দিয়ে মাথা ঢাকা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও নারীদের শরীর সম্পূর্ণ ঢেকে রাখতে পা পর্যন্ত লম্বা ও ঢিলা পোশাক পরার বিধান দেশটিতে রয়েছে। তেহরানে ১৩ সেপ্টেম্বর এই নৈতিকতা রক্ষা পুলিশ যখন মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তার করে তখন হিজাবের তলা দিয়ে তার কিছু চুল দেখা যাচ্ছিল বলে অভিযোগ করা হয়। একটি আটক কেন্দ্রে তাকে নিয়ে যাওয়ার অল্পক্ষণ পরই মাশা আমিনি অজ্ঞান হয়ে যান এবং কোমায় চলে যান। তিন দিন পর তিনি হাসপাতালে মারা যান।

এই পুলিশ বাহিনীর একজন অফিসার নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসিকে বলেন, তিনি বলেন, তারা ছয়জনের দলে কাজ করেন। দলে থাকেন চারজন পুরুষ এবং দুজন নারী পুলিশ। যেসব এলাকায় মানুষ হেঁটে বেশি চলাচলা করে এবং যেসব এলাকায় মানুষের ভিড় বেশি হয়, সেসব এলাকার ওপর তারা বেশি নজর রাখেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close