নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ইভিএম কিনতে ৮৭১১ কোটি টাকার প্রকল্পের খসড়া অনুমোদন

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্পের খসড়া অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে নির্বাচন কমিশনের এক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের এ বিষয়টি জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। অনুমোদিত খসড়ায় তিনটি খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আছে প্রায় দুই লাখ ইভিএম কেনা, ইভিএমে সংরক্ষণের ব্যবস্থা এবং ইভিএমণ্ডসংক্রান্ত জনবল তৈরি।

মো. আলমগীর বলেন, আপনারা জানেন আজ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশন সভা ছিল। সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। আপনারা এ-ও জানেন, বর্তমানে ৭০টি আসনে ইভিএম ভোটগ্রহণের সক্ষমতা আছে কমিশনের। ফলে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট হলে আমাদের আরো ইভিএম মেশিন তথা সরঞ্জাম লাগবে। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প তৈরির জন্য সচিবালয়কে বলা হয়েছিল। সেটা তারা তৈরি করে গত সভায় উপস্থাপন করেছিল। সেখানে আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিল। সে প্রশ্নের উত্তরগুলো সঠিকভাবে দিতে পারেনি বলে আমরা তাদের বলেছিলাম এগুলো ঠিক করে নিয়ে আসার জন্য। তথ্যগুলো আজকের সভায় যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব তথ্য ঠিক আছে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, সরকারের অনুমোদনের জন্য এ প্রকল্প এখন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। পরিকল্পনা কমিশন যাচাই-বাছাইয়ের পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।

সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ দলের বিরোধিতার মধ্যেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হলে ইসিকে নতুন করে আরো ইভিএম কিনতে হবে। এখন সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৭৫টি আসনে ভোট নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে ইসির। তাদের হাতে এখন দেড় লাখ ইভিএম আছে।

গত আগস্টে ইসির সংলাপে ২২টি রাজনৈতিক দল ইভিএম নিয়ে মতামত দিয়েছিল। এর মধ্যে ৯টি দল সরাসরি ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছে। আরো পাঁচটি দল ইভিএম নিয়ে সংশয় ও সন্দেহের কথা বলেছে। কেবল আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ইভিএমে ভোট চেয়েছে। আর কয়েকটি দল শর্তসাপেক্ষে ইভিএমের পক্ষে বলেছে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও মনে করে ইভিএমেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। বিএনপিসহ বিরোধীরা ইভিএমে ভোটের সিদ্ধান্তকে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক চাপ বলে আখ্যা দিলেও সিদ্ধান্তটি ইসির নিজস্ব বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইভিএম নিয়ে শুরু থেকেই রয়েছে বিতর্ক। বিএনপিসহ দেশের অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দল শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করেছে।

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা বলেছেন, আমরা যদি বুঝি এটা দিয়ে ভালো নির্বাচন করা সম্ভব তাহলে ইভিএম কে চাইল কে চাইল না এটা কি মেটার করে? ইলেকশনটা তো আমাদেরই নামাতে হবে। অন্য কেউ তো ইলেকশনটা করে দেবে না।

রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি উপেক্ষা করে ২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন। পরে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশন আগের কমিশনের চালু করা ম্যানুয়াল ইভিএম বাতিল করে নিজেরাই ফিঙ্গার প্রিন্টযুক্ত ইভিএম তৈরি করে। ব্যালটের চেয়ে ইভিএমের খরচ একটু বেশি হলেও নির্বাচনী অনিয়ম দূর করা সম্ভব বলে ইসি মনে করছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইভিএমও অরক্ষিত। ভোটকেন্দ্র দখল হলে ইভিএমেও জাল ভোট দেওয়া সম্ভব।

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিল নূরুল হুদা কমিশন। তখন আলোচনায় ইভিএমের ব্যবহারের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছিল। সে সময় সংলাপে ৩৯টি দলের মধ্যে ২৩টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের মত দিয়েছিল। এর মধ্যে বিএনপিসহ ১২টি দল ছিল ইভিএমের বিপক্ষে। আর আওয়ামী লীগসহ ১১টি দল ছিল পক্ষে। পক্ষে থাকা দলগুলোর মধ্যেও কয়েকটি দল পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলেছিল। শেষ পর্যন্ত গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়।

ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, গত পাঁচ বছরে মোট ৭৯১টি নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের পাশাপাশি জাতীয় সংসদের বিভিন্ন আসনের উপনির্বাচনও ভোট হয়েছে ইভিএমে। জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের যেসব নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব মূলত শহর এলাকায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close