নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মিয়ানমারের দূতকে ডেকে কড়া প্রতিবাদ, চিঠি

বাংলাদেশ সীমান্তে হামলার ঘটনায় চতুর্থবারের মতো মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ অং কিয়াউ মোকে ডেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে ঢাকা। রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাজির হন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অণু বিভাগের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক নাজমুল হুদার দপ্তরে ডেকে নেওয়া হয়। এ সময় বাংলাদেশ সীমান্তে একের পর এক হামলার ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে একটি চিঠি দেওয়া হয় এবং নাজমুল হুদা রাষ্ট্রদূতের কাছে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন।

পরে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়া এড়াতে দৌড়ে গাড়িতে ওঠেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত। এর আগে একই ধরনের ঘটনায় ২১ আগস্ট, ২৮ আগস্ট ও ৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রদূতকে তিন দফা ডাকা হয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

এদিকে, মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনায় মিয়ানমারের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ফলে ভুলক্রমে ঘটেছে নাকি উসকানিমূলক তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।

সেতুমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে এবং প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। তখন মিয়ানমার জানিয়েছিল মর্টারশেলটি ভুলক্রমে বাংলাদেশের সীমানায় গিয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে তারা সতর্ক থাকবেন বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছিলেন।

কাদের বলেন, আবারও একই ঘটনা ঘটায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইন ও প্রটোকলের আলোকে খতিয়ে দেখছে। এ ঘটনা মিয়ানমারের বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ফলে ভুলক্রমে ঘটেছে নাকি উসকানিমূলক তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, এ দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি শেখ হাসিনা সরকারের কাছে নিজের অস্তিত্বের মতো। বাংলাদেশ চায় যেকোনো সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ও লন্ডনে এ বিষয়ে কথা বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু নোম্যানস ল্যান্ডে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় মিয়ানমারের মর্টারশেল নিক্ষেপে ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। এছাড়া ওই ঘটনায় এক শিশুসহ পাঁচ রোহিঙ্গা নাগরিক আহত হন। তারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার ভূখণ্ড থেকে ছোড়া একটি গুলি বাংলাদেশ সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় এসে পড়ে। এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় পড়ে। তার আগে ২৮ আগস্ট বিকালে মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা একটি মর্টারশেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তুমব্রুতে এসে পড়ে।

রাখাইনে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারি বাহিনীর সংঘাতের ধারাবাহিকতায় এমন ঘটনা ঘটে চলেছে বলা হচ্ছে। তবে সবকিছু মাথায় রেখেই সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রেখেছে বাংলাদেশ। জানা গেছে, সাম্প্রতিক এ পরিস্থিতির কারণে বান্দরবানসহ মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে বরাবরই মিয়ানমার থেকে গোলা এসে পড়া এবং হতাহতের ঘটনায় দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

এসব ঘটনায় বাংলাদেশকে যুদ্ধের ফাঁদে ফেলার অপচেষ্টা চলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মিয়ানমারে অবস্থানরত বাকি ছয় লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে দেশটি।

আর এ কারণেই হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমান দিয়ে বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘনের পর উসকানিমূলকভাবে মর্টারশেল নিক্ষেপ করছে।

এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গাবিষয়ক গবেষক প্রফেসর ড. জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে তারা মর্টারশেল নিক্ষেপ করছে। একটা চাপ সৃষ্টি করে তারা চায় বাকি রোহিঙ্গারাও যেন বাংলাদেশ বা অন্য কোথাও চলে যায়। এছাড়া উসকানি দেওয়া হচ্ছে যে বাংলাদেশ যেন যুদ্ধে জড়ায়। এতে রোহিঙ্গা নির্যাতন আরো বেড়ে যাবে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে তারা মাইন পুঁতেছে। তারা চূড়ান্তভাবে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করছে। তারা বারবার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে। অতীতে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি বলে তারা আবার আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করার দুঃসাহসটা দেখাচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close