নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ আগস্ট, ২০২২

ধনী হতেই ৮ বছরে ৫০০ মোটরসাইকেল চুরি

চক্রের হোতাসহ ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

অল্প সময়ে ধনী হওয়ার নেশায় চুরিতে নামে এক দল তরুণ। তারা বিত্তশালী হতে গত আট বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে। চুরি করা মোটরসাইকেলগুলোর অধিকাংশই সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মডেলের।

সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর চক্রকে দীর্ঘদিন নজরদারির পর মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর শনিরআখড়া ও ধলপুর এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় চক্রের হোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি)।

গ্রেপ্তাররা হলো চক্রের মূলহোতা নুর মোহাম্মদ, অন্যতম সহযোগী রবিন, সজল, মনির ও আকাশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৩টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সুজুকি জিক্সার মডেলের মোটরসাইকেল চুরি করত নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগীরা। বাইক চুরির জন্য চক্রটি বিশেষভাবে মাস্টার কি (নকল চাবি) তৈরি করে তা ব্যবহার করত। সুযোগ বুঝে এই নকল চাবির মাধ্যমে টার্গেট করা বাইকটি স্টার্ট করেই পালিয়ে যেত। এভাবে চক্রটি পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে গত কয়েক বছরে অন্তত ৫০০টি মোটরসাইকেল চুরি করেছে। এরপর চোরাই মোটরসাইকেলগুলো কেরানীগঞ্জ, দোহার, মুন্সীগঞ্জসহ ঢাকার পাশের বিভিন্ন এলাকায় কম দামে বিক্রি করে দিত।

ডিবি আরো জানায়, সম্প্রতি রাজধানীর ওয়ারী ও গে-ারিয়া থানায় দুটি মোটরসাইকেল চুরি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এ চোর চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়।

বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর রশীদ।

তিনি বলেন, মোটরসাইকেল চোর চক্রের অনুসন্ধানে প্রথমে নুর মোহাম্মদ ও রবিনকে যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চক্রের অন্য তিন সদস্য সজল, মনির ও আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মডেলের ১৩টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়। এর মধ্যে সুজুকি ব্র্যান্ডের জিক্সার মডেলের সংখ্যাই বেশি।

গ্রেপ্তার নূর মোহাম্মদের বিষয়ে ডিবিপ্রধান বলেন, সে মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করত। আগে তার বাসা ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জে হাসনাবাদ এলাকায়। এক দিন হাসনাবাদ গলির ভেতর চায়ের দোকানে রবিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। দুজন মিলে পরিকল্পনা করে, কীভাবে দ্রুত সময়ে বড়লোক হওয়া যায়। নুর মোহাম্মদ রবিনকে বলে, তার কাছে করাত ধার দেওয়ার রেদ আছে, যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক রবিনের জিক্সার মোটরসাইকেলের চাবি রেদ দিয়ে ঘষে পাতলা করে শারিঘাটে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটরসাইকেল পরীক্ষামূলকভাবে চুরি করে। এরপর থেকে এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন ধরে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে। তিনি বলেন, চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা ঢাকার দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসেবে যুক্ত করে। ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিরাপদ রোড হিসেবে পোস্তগোলা সেতু পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার ও দোহারে যেত।

অন্যদিকে বাবুবাজার সেতু পার হয়ে কেরানীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকায় যাওয়ার রুট হিসেবে ব্যবহার করে। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে চোরাই মোটরসাইকেল ‘ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস গাড়ি’ বলে বিক্রি করে আসছিল। গ্রেপ্তার সজল নিজেও বড়লোক হওয়ার নেশায় দোহারের মেঘুলা বাজারের একজন ধনী বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু মেয়ের মা-বাবা তাদের মেয়ের সঙ্গে সজলের সম্পর্ক ছিন্ন করলে সজল হতাশ হয়ে বড়লোক হওয়ার নেশায় আসামি নুর মোহাম্মদ ও রবিনদের চক্রে যোগ দেয়।

গ্রেপ্তার সজল, মনির ও আকাশদের মূল কাজ ছিল দোহার ও আশপাশের এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা। প্রতিটি চোরাই মোটরসাইকেল তারা ৪০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করত। এই টাকা নুর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ, রবিন ৩০ শতাংশ ও অবশিষ্ট টাকা অন্যরা ভাগ করে নিত।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে। এ পর্যন্ত ৫০০টিরও বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছে।

ডিবিপ্রধান বলেন, বিভিন্ন থানায় নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা, রবিনের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে ১টি করে মামলা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close