নিজস্ব প্রতিবেদক
ভোগান্তি কমেনি গণপরিবহনে
* রাজধানীতে ভাড়ায় নৈরাজ্য ঝগড়া হাতাহাতি * গণপরিবহনের ভাড়া সরকারিভাবে বৃদ্ধি * সড়কে বাড়েনি বাসের সংখ্যা
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তবে সড়কে বাড়েনি বাসের সংখ্যা। এতে শনিবারের মতো রবিবারও (৭ আগস্ট) কর্মব্যস্ত রাজধানীতে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সরকারিভাবে বাস ভাড়া বাড়ানোর পরও যানবাহন কম দেখা গেছে সড়কে।
পরিবহন ও শ্রমিক নেতারা জানান, গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাস ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রমিক ও চালকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর ইস্যুতে এ কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। মজুরি না বাড়ায় চালক ও সহকারীদের অনেকেই কাজে যোগ দেননি। ঢাকা নগরীতে বিভিন্ন রুটে ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে ভাড়া সমন্বয় করতে শনিবার রাতে বৈঠকে বসেন সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতা ও পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। ওই বৈঠকেও বাস ভাড়া বাড়ানো ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা সমন্বয় করা নিয়ে বিতর্কে জড়ান তারা। এই বিতর্কের বলি এখন সাধারণ মানুষ।
রবিবার রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, শাহবাগ, বাসাবো, মুগদা ও মহাখালীসহ ব্যস্ত সড়কগুলোতে শনিবারের মতো গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল অনেক কম। এ কারণে সরকার থেকে বর্ধিত ভাড়া নির্ধারণ করার পরও সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ভোগান্তিতে পড়েছে অফিসগামী যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ।
গণপরিবহনে বর্ধিত নতুন ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও বাসকর্মীদের মধ্যে বাগবিত-ার ঘটনা ঘটছে। নির্ধারিত ভাড়ার বেশি আদায়ের অভিযোগও করেছেন অনেক যাত্রী। রাজধানীতে আগের সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ১০ টাকা, জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর কারণে তা বাড়িয়ে ১৫ টাকা আদায় করছেন বাসচালক ও বাস হেলপাররা। কিন্তু নতুন বর্ধিত ভাড়া অনুয়ায়ী এই ভাড়া হবে ১১ টাকা ৬০ পয়সা। মিরপুর-ফার্মগেট-শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যে ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। একই দূরত্বে ২০ টাকা বাড়িয়ে এ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। একজন যাত্রীর দৈনিক এ কারণে ব্যয় বেড়েছে ১০০ টাকার কাছাকাছি।
বাসযাত্রী আলিমুল্লাহ ফার্মগেটে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাসের ভাড়া আদায়কারীরা সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়ার রেট মানছেন না। তারা ইচ্ছামতো ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা এবং ২০ টাকার ভাড়া ৪০-৫০ টাকা আদায় করছেন এবং বেশি ভাড়া দিতে না চাইলে যাত্রীকে অপমান করছেন। বাস থেকে নামিয়ে দিচ্ছেন। হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে।’
গত শুক্রবার জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানো হয়। শনিবার রাজধানীতে সড়কে উল্লেখযোগ্য হারে কম ছিলো গণপরিবহন। পরিবহন সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এ দিন হাতে গোনা কিছু বাস চললেও বেশির ভাগই নামেনি সড়কে। বিআরটিএ ও পরিবহন মালিকদের বৈঠক থেকে ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয় শনিবার রাত সাড়ে ১০টায়। রবিবার থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে। বর্ধিত এই ভাড়া ঢাকায় ১৬ শতাংশ এবং দেশের অন্য স্থানে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়। এতেও খুশি নন বাস-ট্রাকের মালিকরা। তারা এই দুর্মূল্যের বাজারে বাস ড্রাইভার ও কনডাক্টরদের মজুরি বাড়াতে রাজি নন। এ কারণে গতকালও দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে।
এই দুর্ভোগের বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাহ গণপরিবহনের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, কোথাও এ সংকট নেই। জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেক মালিক বাস নামাননি। এর পেছনে অসৎ কোনো উদ্দেশ্য নেই। দু-এক দিন গেলেই এ সংকটও দূর হবে।
শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব ওসমান আলী বলেন, বাস ভাড়া বাড়ালে শ্রমিকদের বেতন-ভাতার প্রসঙ্গটি আসে। অতএব সব ক্ষেত্রে সমন্বয় হওয়া জরুরি। এ নেতার সুরেই কথা বলেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা জানিয়েছেন, বাস মালিকপক্ষের কাছ থেকে গতকাল পর্যন্ত বেতন বাড়ানোর কোনো আশ্বাস তারা পাননি। এ কারণে অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দেননি। রাজধানীর সড়কে বাস ও যানবাহন কম থাকার এটাও একটা কারণ।
"