নুর নবী রবিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

  ০৭ আগস্ট, ২০২২

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের নিয়োগ কেলেঙ্কারি

ফের অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগে। এবার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অর্থ লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। তিন চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রেজিস্ট্রার অফিসের নিম্নমান সহকারী মানিক চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে। টাকা ফেরত চাওয়ায় প্রার্থীকে হুমকিও দেন মানিক। এমন অডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, ২০২১ সালে ৩১ মে ও পহেলা জুন দুটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে নিম্নমান সহকারী ও অফিস সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে মাদারীপুরের রাকিব ফরাজী, সোহেল খান ও মাকসুদুল সালেহীনের কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেন মানিক।

ফোনালাপ ফাঁসের কথোপকথন :

মানিক চন্দ্র দাস: তুমি আমারে চিনো? একদম খাইয়া ফেলবো, একদম পেটের মধ্যে মোচড় দিয়া খাইয়া ফেলবো তোরে।

প্রার্থী: আচ্ছা দেখা যাবে।

মানিক চন্দ্র দাস: পেটের মধ্যে মোচড় দিয়া খাইয়া ফেলবো কিন্তু একদম। পার্সোনাল বিহেবিহার ঠিক করতে না পারলে খাইয়া ফেলবো একদম।

প্রার্থী: যত টাকা নিছেন, সব টাকা এই মাসের মধ্যেই দিবেন।

মানিক চন্দ্র দাস: এই বেটা কিসের টাকারে তোর, তুই জুলাইয়ের আগে এক টাকাও পাবি না। শুন তুই পরীক্ষা দিছোস তোর এপ্লিকেন্ট পরীক্ষা দেক, তখন যদি না হয় তুই ফুল টাকা পেয়ে যাবি একসঙ্গে।

প্রার্থী: না, এই মাসের মধ্যেই দিবেন।

মাকসুদুল সালেহীন নামে এক প্রার্থী বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানিক আমাদের কাছ থেকে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমি টাকা ফেরত চাইলে তিনি আজকে, কালকে দিবে বলে ঘুরাতে থাকেন। এক পর্যায়ে হুমকিও দেন তিনি। পরে আমি টাকা চেয়ে লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছি মানিকের কাছে।

আরেক প্রার্থী সোহেল খান বলেন, আমার কাছ থেকে মানিক চন্দ্র দাস সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। চাকরির নাম করে তিনি প্রতারণা করেছেন। আমিও লিগ্যাল নোটিস পাঠাবো শিগগিরই।

অভিযোগের বিষয়ে মানিক চন্দ্র দাস বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। আমাকে ফাঁসানোর এজন্য এটা করছে তারা। আমি আইনি পদক্ষেপ নিব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘এদের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। প্রশাসনকে বিপাকে ফেলতে তারা এসব কর্মকাণ্ড করছে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব। ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। পাশাপাশি ফৌজদারি মামলা করা হবে।’

এর আগে, গত ৩ মার্চ ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত কয়েকটি অডিও ফোনালাপ ফাঁস হয়। এ ঘটনায় গত বছর ৯ জানুয়ারি হাটহাজারী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর মার্চে সিন্ডিকেট সভায় এই নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ বাতিল ও জড়িতদের শনাক্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে গত ৭ জুলাই অডিও ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় উপাচার্যের সাবেক পিএস খালেদ মিসবাহুল মোকর রবীনকে পদাবনতি ও কর্মচারী আহমেদ হোসেনকে চাকরিচ্যুত করে সিন্ডিকেট। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত একটি অসাধু চক্র আছে বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close