মিজান রহমান

  ০৭ আগস্ট, ২০২২

আম রপ্তানিতে নজর

আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। প্রায় ৭২ জাতের আম উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। অথচ আম রপ্তানিতে শীর্ষ দেশের মধ্যে নেই বাংলাদেশ। জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমের সরবরাহ থাকে। সামগ্রিক বিবেচনায় পুষ্টিকর, সুস্বাদু আম আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ ও উচ্চ মানসম্মত আম উৎপাদন করা সম্ভব হলে দেশের রপ্তানি আয় বাড়বে। তাই এখন আম রপ্তানিতে নজর দিয়েছে সরকার। এজন্য রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। নষ্ট রোধ করে বাড়তি আম রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। প্রকল্পের ব্যয় ৪৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। প্রকল্প শুরু হয়েছে জুলাই ২০২২ এবং ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে এটি বাস্তবায়ন করবে ডিএই।

খোঁজ নিয়ে দেখা গছে, বর্তমানে দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, মেহেরপুর, সাতক্ষীরা এবং পার্বত্য জেলায় এখন বেশ মানসম্মত আম উৎপাদন হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে এসব জেলার দূরত্ব অনেক। পরিবহন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণসহ নানা কারণে প্রতি বছর উৎপাদিত আমের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়। অধিক আম উৎপাদন হয় এমন জেলার যেসব কৃষকের ৫০ শতকের বেশি কৃষিজমিতে আম বাগান রয়েছে, তাদের উপকারভোগী কৃষক হিসেবে বাছাই করা হবে। রপ্তানিমুখী বাজার সংযোগ স্থাপন করতে কাজ করবে এ প্রকল্প।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ২,৩৫,৩৪৮ একর জমিতে আম চাষ হয় এবং ১২,২২,৩৬৮ টন লাখ টন আম উৎপাদন হয় (বিবিএস, ২০২০, প্রকাশিত মে, ২০২১। ডিএইর তথ্য মতে বাংলাদেশে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশে ১৮৯৮৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয় এবং উৎপাদিত আমের পরিমাণ ২৪,৬৮,০৫০ টন। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলারের আম রপ্তানি বাণিজ্য হয়। বাংলাদেশ ২০২১ সালে প্রায় ২৩০০ টন আম রপ্তানি করেছে (প্লান্ট কোরাইন্টাইন উইং, ডিএই), যা পূববর্তী বছরের প্রায় ৫ গুণ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালে ১ হাজার ৬২৩ টন আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আম যায় ইংল্যান্ড, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও হংকংয়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বছরে দেশে এক লাখ ৭৯ হাজার টন আম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে নষ্ট হয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় পাঁচ শতাংশ আমের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আম নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষাসহ বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন বাড়ানো হবে। এতে রপ্তানি বাড়বে দ্বিগুণ। প্রকল্প এলাকার অন্তর্ভুক্ত দেশের চারটি বিভাগের ১৫টি জেলার ৪৬টি উপজেলা এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।

এই প্রকল্প নেওয়ার প্রধান কারণগুলো : উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানসম্মত আমের বর্তমান অবস্থা থেকে পাঁচ শতাংশ উৎপাদন বাড়ানো, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকের আয় বাড়ানো, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, রপ্তানি আয় বাড়ানো ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন। মানসম্মত আম উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষক, কর্মকর্তা এবং সুবিধাভোগী (স্টেকহোল্ডার) জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। ডিএই জানায়, আম পুষ্টিকর ফল। অতুলনীয় স্বাদের জন্য একে ফলের রাজা বলা হয়। বিশ্বে আম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশে প্রায় ৭২ জাতের আম উৎপাদিত হয়, যার মধ্যে জনপ্রিয় জাতগুলো হলো- ক্ষীরসাপাত, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি, হাড়িভাঙা ও আম্রপালি। বাংলাদেশে জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আমের সরবরাহ থাকে। সামগ্রিক বিবেচনায় পুষ্টিকর, সুস্বাদু আম আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ ও উচ্চ মানসম্মত আম উৎপাদন করা সম্ভব হলে দেশের রপ্তানি আয় বাড়বে। পাশাপাশি করোনাকালীন গ্রামে ফেরা মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রম উত্তম কৃষিচর্চার মাধ্যমে আম উৎপাদনে ২ হাজার ৩০০টি প্রদর্শনী, ২ হাজার ৩০০টি রপ্তানিযোগ্য জাতের আম বাগান সৃজন, বিদ্যমান ১ হাজার ৮৪০টি আম বাগানে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা করা এবং ১ হাজার ৮৪০টি বাগানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার (ব্যাগিং ও বালাই ব্যবস্থাপনা) করে মানসম্মত আম উৎপাদন। ৯২০ ব্যাচ কৃষক প্রশিক্ষণ, রপ্তানিকারক, বাজারজাতকারী ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডার প্রশিক্ষণ, আম পরিবহন, কার্গো ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের প্রশিক্ষণ, কৃষি অফিসার্স প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণ, পাঁচটি ম্যাংগো গ্রেডিং, ক্লিনিং ও কুলিং শেড নির্মাণ, ৯২০টি ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও সরবরাহ, চারটি হাইড্রোলিক ম্যাংগো হারভেস্টার, ৪৬টি গার্ডেন টিলার, ৯২০টি ফুট পাম্প, ৪৬০টি পাম্প ও ৪৬০ সেটা ফিতা পাইপ কেনা হবে।

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আম উৎপাদন, প্যাকেজিং এবং রপ্তানি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে ১০ জন কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার সুযোগ রাখা হয়েছে।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য : উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানসম্মত আমের বর্তমান অবস্থা থেকে পাঁচ শতাংশ উৎপাদন বাড়ানো, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকের আয় বাড়ানো, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, রপ্তানি আয় বাড়ানো ও গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন। মানসম্মত আম উৎপাদন ও সংরক্ষণ বিষয়ে কৃষক, কর্মকর্তা এবং সুবিধাভোগী (স্টেকহোল্ডার) জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। অথচ আম রপ্তানিতে শীর্ষ দেশের মধ্যে নেই বাংলাদেশ। পুষ্টিকর, সুস্বাদু আম আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ ও উচ্চ মানসম্মত আম উৎপাদন করা সম্ভব হলে দেশের রপ্তানি আয় বাড়বে। তাই এখন রপ্তানিতে নজর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের আমের ব্যাপারে বিশ্বের অনেক দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে, গ্যাপ অনুসরণে মানসম্মত আম উৎপাদন করা গেলে আমভিত্তিক রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। কৃষি খাতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাবে। প্রকল্পটি আম রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close