নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ আগস্ট, ২০২২

‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন সম্মোহনী বক্তা’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন জননেতা এবং আন্দোলনকারী মানুষ। আজীবন সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ এবং সম্মোহনী বক্তা হিসেবে তিনি বৃষ্টিস্নাত শতসহস্র জনতাকে আগুনের উত্তাপে আলোড়িত করতে পারেন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সর্বজনীন সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পরপরই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমেরিকার মূল্যায়ন ছিল এ রকমই। তাদের বর্ণনায় শেখ মুজিব ছিলেন এক সম্মোহনী বক্তা, যিনি তার রাজনৈতিক দক্ষতাকে কর্তৃত্বের সঙ্গে কাজে লাগাতে পারেন। বাঙালিদের মধ্যে তার এমন প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই, এমন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত কেউ নেই যিনি তাকে ছাড়িয়ে যাবেন।

আমেরিকান সাংবাদিক লেখক বি জেড খসরুর ইংরেজিতে লেখা ‘বাংলাদেশে মিলিটারি ক্যু সিআইএ লিঙ্ক’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আর্চার ব্লাডের এই মূল্যায়নের বিস্তারিত বর্ণনা আছে। গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন সিরাজ উদ্দিন সাথী। বাংলাদেশে দি ইউনিভার্সেল অ্যাকাডেমি গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে।

আমেরিকান কূটনীতিকদের চোখে শেখ মুজিব তখন পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। নির্বাচনের তিন দিন পর ১০ ডিসেম্বর ঢাকার আমেরিকান কনসাল জেনারেল আর্চার ব্লাড ওয়াশিংটনে বার্তা পাঠিয়ে শেখ মুজিব সম্পর্কে তাদের মূল্যায়নে আরো লেখেন, ৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান একদলীয় রাজ্যে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের এই অবাক করা বিজয় দলের বিজয়ের চেয়েও ব্যক্তির একক ভাবমূর্তির বিজয়। সব ক্ষমতাশালী দলের কাছে অবিতর্কিত নেতা হচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান। যদিও এমন বিজয়ের খুব একটা অবাক হননি মুজিব। আমেরিকান কূটনীতিকদের ছয় মাস আগেই কথা প্রসঙ্গে এমন বিজয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি।

আর্চার ব্লাড এখানেই থেমে থাকেননি। শেখ মুজিবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, গুণাবলি ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি লিখেন- ‘মুজিব আজীবন সার্বক্ষণিক রাজনীতিবিদ। আমরা যতদূর জানি তিনি আইনের ডিগ্রি না নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। কখনো কোনো চাকরি বা ব্যবসায় নিয়োজিত হননি। তার দৃষ্টিগ্রাহ্য আয়ের উৎস হচ্ছে গ্রেট ইস্ট্রার্ন লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির উপদেষ্টা হিসেবে প্রাপ্ত অর্থ।’

একান্ত বৈঠক ও সাক্ষাতে তিনি (মুজিব) চমৎকার, শান্ত এবং আত্মপ্রত্যয়ী উল্লেখ করে আর্চার বলেন, ভুট্টোর মতো বিশ্বজনীন আভিজাত্য তার নেই। তবে তিনি বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন এবং নাগরিক জীবনের মানুষ।

আর্চার লেখেন, মঞ্চে তিনি অনলবর্ষী বক্তা। বৃষ্টিস্নাত শতসহস্র জনতাকে তিনি আগুনের উত্তাপে আলোড়িত করতে পারেন। দলনেতা হিসেবে তিনি কঠোর ও কর্তৃত্ববাদী, প্রায়ই বেপরোয়া। মুজিবের মধ্যে আছে মসীহর মতো জটিল দিক। জনতোষণ ও মনোরঞ্জনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচির অভিজ্ঞতায় তা ক্রমেই আরো জোরদার হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর কথা বলার ধরন নিয়েও আর্চার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার লোক, আমার জমি, আমার বন, আমার নদী উচ্চারণে। এতে স্পষ্ট মনে হয় তিনি নিজেকে পরিচয় দেন বাঙালির আশা ভরসার ব্যক্তি হিসেবে। মুজিব যখন বাঙালির দুঃখণ্ডবেদনার কথা বলেন তখন তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তাকে নিয়মানুগ চিন্তাবিদ বলে মনে হয় না, বরং তাকে নিয়ম ভাঙার মেজাজের অধিকারী বলেই বেশি মনে হয়।’ তবে বঙ্গবন্ধুকে প্রথমত একজন জননেতা, আন্দোলনকারী মানুষ হিসেবে তাকে অভিহিত করেন আর্চার।

অন্যদিকে নিন্দুকেরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কী ধারণা করে তাও তুলে ধরেন আর্চার। নিন্দুকদের মতে, শেখ মুজিবের বুদ্ধিবৃত্তিক গভীরতা ছিল কম এবং ক্ষমতার জন্য লোভী। এর জবাবে অবশ্য আর্চার বলেন, যদিও তিনি বুদ্ধিজীবী নন, তবু একান্ত বৈঠকে মুজিব উল্লেখযোগ্য মানসিক চৌকষতা প্রদর্শন করে থাকেন এবং তার রসবোধও যথেষ্ট।

আমেরিকানদের কাছে শেখ মুজিব পাকিস্তান আমল থেকেই উদারবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যদিও বঙ্গবন্ধু একটা সময় স্বায়ত্তশাসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। চূড়ান্তপর্যায়ে তিনি স্বাধীনতা চেয়েছেন এবং স্বাধীনতার ঘোষণাও দেন। বঙ্গবন্ধুর সেই ডাকে সারা দিয়ে বাঙালি ৯ মাস পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close