নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৬ আগস্ট, ২০২২

কাঁচামরিচের কেজি ২৫০

অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে কাঁচামরিচের বাজার। গেল সপ্তাহে প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এক লাফে এ সপ্তাহে ছাড়াল আড়াই শ টাকা। কয়েকটি বাজারে ২৬০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মৌসুম শেষের দিকে। তাই ফলন কম হওয়ায় বাজারেও চাহিদামতো আসছে না; এতে দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কাঁচামরিচের দাম আকাশচুম্বী। উত্তর বাড্ডা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, মূল বাজার সংলগ্ন দোকানগুলোতে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে। রাস্তার পাশে টুকরিতে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা। এদিকে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার বরঙ্গাইল বাজার কাঁচামরিচের বড় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মরিচের দাম নিয়ে ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, কদিন আগেও ২৫০ গ্রাম মরিচ কিনেছি ২৫ টাকায়। এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়েছে ৬০ টাকা। আগেও এভাবে মরিচের দাম বেড়ে গিয়েছিল। নিত্যপণ্যের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

শান্তিনগর কাঁচাবাজারে মরিচের দাম ২৬০ টাকা কেজি। অনেকেই ২৫০ গ্রাম মরিচ না কিনে, খরচ বাঁচাতে ১৫০ গ্রাম কিনেছেন।

মরিচের দাম এত কেন জানতে চাইলে ব্যবসায়ী হেদায়েতুল্লাহ মিন্টু বলেন, আমাদের করার কী আছে? পাইকারি বাজারে মরিচের দাম বেশি।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী লতিফ মুন্সী বলেন, এখানে বেশির ভাগ মরিচ আসে উত্তরবঙ্গ থেকে। তবে ফলন কম হওয়ায় চাহিদামতো মরিচ আসছে না। যা আসছে তার দামও আকাশছোঁয়া।

আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী হাবিব ব্যাপারী বলেন, আমি বৃহস্পতিবারও মরিচের পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি করেছি ৯০০ টাকায়। শুক্রবার বিক্রি করতে হচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। শুধু ঢাকা নয়, যেসব জায়গা থেকে মরিচ আসে, সেখানেও বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকায়। এতে পরিবহন ব্যয় মিলে দাম বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই।

মরিচের দাম কবে কমবে জানতে চাইলে মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা হানিফ সওদাগর বলেন, পাইকাররা বলছেন, মরিচের চলতি মৌসুম শেষের দিকে। খেতে নতুন মরিচ ওঠার পর দাম কমে আসবে।

জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ থেকে জানা যায়, শুধু ঢাকা নয়, দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বেড়েছে মরিচের দাম। স্থানভেদে মরিচের দাম কেজিতে ১৮০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত। খাগড়াছড়ি জুম পাহাড়ি মরিচের কেজি ৩২০-৪০০ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন মৌসুম শুরু না হওয়া পর্যন্ত মরিচের দাম আকাশচুম্বী থাকবে।

মানিকগঞ্জ : শিবালয় উপজেলার বরঙ্গাইল বাজার কাঁচামরিচের বড় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মরিচ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর বাসস্ট্যান্ড পৌর কাঁচাবাজারেও মরিচের সরবরাহ কম দেখা গেছে। কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি।

খাগড়াছড়ি : দীঘিনালায় স্থানীয় হাটবাজারে জুমে উৎপাদিত কাঁচামরিচ (স্থানীয় ভাষায় ধান্নো মরিচ) গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। বিক্রেতারা জানান, জুমের নতুন মরিচ বাজারে আসতে আরো এক মাস বাকি আছে। এখন সরবরাহ কম। এ কারণে দাম বেড়েছে।

নওগাঁ : এক সপ্তাহ আগেও বিভিন্ন হাটবাজারে যে মরিচ ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল, সেই মরিচ বর্তমানে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে নওগাঁ জেলায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচের আবাদ হয়েছে। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাঁচামরিচের আবাদ হয়ে থাকে নওগাঁ সদর, মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলায়।

মহাদেবপুর উপজেলার মমিনপুর এলাকায় সবচেয়ে বড় কাঁচামরিচ বিক্রির পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খেত থেকে মরিচ তুলে তা বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন চাষিরা। সেখান থেকে ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছে থেকে মরিচ কিনে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে থাকেন। এই বাজারে প্রতি মণ কাঁচামরিচ ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে ব্যবসায়ীরা কিনছেন।

স্থানীয় মরিচচাষি সুবির চন্দ্র বলেন, খরায় মরিচের ফলন কমে গেছে।

রমজান আলী নামের চাষি বলেন, খরায় মরিচগাছের পাতা ঝরে যাচ্ছে। একটু বৃষ্টি আবার ঠিক হয়ে যেত। তেমন বৃষ্টিই হচ্ছে না। তবে বাজারে কাঁচামরিচের দাম বেশ ভালো। দেড় বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। ১৯০ টাকা কেজি দরে এখন মরিচ বিক্রি হচ্ছে।

বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামের চাষি খোরশেদ হোসেন বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেছি। ফলন ও দাম ভালো। যদি কয়েক দিনের মধ্যে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয় তাহলে মরিচখেতের পাতা ঝরা সমস্যা থাকবে না।

সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের চকআতিতা গ্রামের চাষি রেজাউল করিম বলেন, এক মাস আগেও ৫০-৬০ কেজি দরে মরিচ বিক্রি করেছি। ১৫ দিন আগে ৭০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে বাজারদর ভালো। এখন প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে। ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজিতে।

মহাবেদবপুর উপজেলা সদরের কাঁচামরিচের পাইকারি বাজারের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই বাজারে এখন বেচাকেনা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ মণ। ২০ থেকে ২৫ জন ব্যবসায়ী দিনে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার কাঁচামরিচ বেচাকেনা করছেন।

বাগাতিপাড়া (নাটোর) : মালঞ্চি, বিহাড়কোল, ছাতিয়ানতলা, তমালতলা, দয়ারামপুর, লোকমানপুর ও জামনগর বাজারসহ অধিকাংশ হাটবাজারে এক কেজি কাঁচামরিচ ২১০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার সোনাপাতিল এলাকার ভ্যানচালক আবদুুর রশিদ ও আমিন উদ্দিন জানান, মালঞ্চি বাজারে কাঁচামরিচ কিনতে গিয়ে দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারেননি। পরে তারা বিকল্প হিসেবে শুকনো মরিচ কিনেছেন।

মালঞ্চি রেলগেটের শরিফ ও দয়ারামপুর সিনেমা হলের সামনে মুড়ি বিক্রেতা নারায়ণ চন্দ্র জানান, কাঁচামরিচের দাম অতিরিক্ত বেড়ে ২১০-২৩০ টাকা হওয়ায় আগে ২ থেকে ৩ কেজি নিতাম কিন্তু এখন আধা কেজি থেকে এক কেজি দিয়েই চালাই নিচ্ছি।

দয়ারামপুর বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী রূপ চাঁদ ও মাবুল বলেন, কাঁচামরিচের আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। ফলন কম হওয়ায় মরিচ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছে। আমরা এক হাজার টাকায় ৫ কেজি মরিচ কিনে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নীলুফা সরকার জানান, কোনো ব্যবসায়ী যদি কাঁচামরিচের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন বা দাম বাড়ান তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম, মনজুরে মাওলা বলেন, কাঁচামরিচের বাজারদর ভালো। চাষিরা দাম ভালো পাচ্ছেন। তবে দাম বেশি হওয়ায় কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েছেন ক্রেতারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close