নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ...
বঙ্গবন্ধুর কর্ম, ত্যাগ ও দেশপ্রেম বাংলাদেশের ইতিহাসের সব রাষ্ট্রীয় সংগ্রাম, অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আমরা দেখতে পাই বঙ্গবন্ধুর কর্ম, ত্যাগ ও দেশপ্রেম। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রধান শক্তির উৎস ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বায়ান্নর বর্ণমালার সংগ্রাম, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আটান্নর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা-আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সবটাজুড়ে আছে তার আদর্শ, নীতি ও নেতৃত্বের ছাপ। গণতান্ত্রিক অধিকারের পক্ষে কিশোর বয়স থেকেই তিনি ছিলেন সর্বদা বজ্রকণ্ঠ। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন শেখ মুজিব। ম্যাট্রিকুলেশন পাসের পর কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। তিনি কলকাতায় পড়াশোনা করার সময় বেঙ্গল মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিমের কাছ থেকেই রাজনৈতিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।
১৯৪৪ সালে কুষ্টিয়ায় নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে শেখ মুজিব বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। কলকাতায় বসবাসকারী ফরিদপুরবাসীদের নিয়ে গঠিত ‘ফরিদপুর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সেক্রেটারি মনোনীত হন তিনি। এর দুই বছর পর ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালেই তিনি বপন করে গিয়েছেন মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের বীজ। ১৯৬৯ এর ৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলকে ‘বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত করার আহ্বান জানান।
জেল, জুলুম, অত্যাচার কিছুই তাকে বাঙালির মুক্তির স্বপ্নযাত্রা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সামরিক আইন, সান্ধ্য আইন, জেল-জুলুমণ্ডঅত্যাচার, নির্যাতনের মুখে কোনো দিন তিনি আত্মগোপন করেননি। পাকিস্তানের ২৩ বছরে যৌবনের একযুগের বেশি তিনি জেলে কাটিয়েছেন, কারাগার ছিল তার দ্বিতীয় বাড়ি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন দীর্ঘ ৯ মাস তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় আসে। এরপর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পান বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে তিনি বাঁধভাঙা আবেগে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, ‘আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম, বলেছিলাম আমি বাঙালি আমি মানুষ, আমি মুসলমান একবার মরে দুবার মরে না। আমি বলেছিলাম আমার মৃত্যু আসে যদি হাসতে হাসতে যাবো আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না এবং যাবার সময় বলে যাবো জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
"