প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

পেলোসির তাইওয়ান সফরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা

বেইজিংয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব * তাইওয়ানের আকাশসীমায় ২১ চীনা সামরিক বিমান * পূর্বাঞ্চলে চীনের চারটি যুদ্ধজাহাজ * সামরিক মহড়ার ঘোষণা চীনের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফর করেছেন। তিনি মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাতে তাইপেতে পৌঁছানোর পর তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলে প্রবেশ করে চীনের ২১টি সামরিক বিমান।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) ২১টি সামরিক বিমান ২ আগস্ট রাতে তাইওয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে (এডিআইজেড) প্রবেশ করেছিল।’

তাইওয়ানের এডিআইজেড চীনের দাবি করা স্ব-শাসিত এ দ্বীপটির প্রচলিত আকাশসীমা নয়। তাইওয়ানের এডিআইজেডে চীনের আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলের কিছু অংশও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এমনকি চীনের মূল ভূখণ্ডের কিছু অংশও রয়েছে। যদিও তাইওয়ানকে নিজেদের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে বেইজিং।

এদিকে চীনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা ‘উচ্চ সতর্ক’ অবস্থানে আছে এবং পেলোসির তাইওয়ান সফরের প্রতিবাদে সামরিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। তবে কবে ও কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, তা জানায়নি। এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘যারা আগুন নিয়ে খেলবে, তাদের সেই আগুনে পুড়তে হবে।’

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে এশিয়া সফরে রয়েছেন। মালয়েশিয়া থেকে মঙ্গলবার রাতে তারা তাইপে পৌঁছান। যদিও পেলোসির সফরের খবর জানার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে আসছিল চীন। এ নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং ব্যাপক উত্তেজনা চলছে। এ সফরের প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের চারপাশে সামরিক মহড়া চালানোর ঘোষণা দিয়েছে চীন।

এদিকে ওয়াশিংটন তাইওয়ানকে ছেড়ে যাবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন ন্যান্সি পেলোসি। বুধবার (৩ আগস্ট) তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর বিবিসি ও আল-জাজিরার।

পেলোসি বলেন, ‘আমাদের প্রতিনিধিদল তাইওয়ানে এসেছে দ্ব্যর্থহীনভাবে এটা স্পষ্ট করে দিতে যে, আমরা তাইওয়ানের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি ত্যাগ করব না। আমিও এই প্রতিনিধিদলের একজন গর্বিত সদস্য। আমরা আমাদের স্থায়ী বন্ধুত্বের জন্য গর্বিত। এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে তাইওয়ানের প্রতি আমেরিকার সংহতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরা আজ সেই বার্তাটিই এখানে নিয়ে এসেছি।’

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইংওয়েনের সঙ্গে বৈঠকে পেলোসি বলেন, যখন আইনপ্রণেতারা ১৯৭৯ সালে ‘তাইওয়ান সম্পর্ক আইন’ পাস করেছিলেন, তখনই তাইওয়ানের পাশে সব সময় দাঁড়ানোর নীতিগত অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই আইনটি দ্বীপটির আত্মরক্ষায় সহযোগিতা করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে।

২৫ বছরের মধ্যে তাইওয়ান সফর করা সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ মার্কিন রাজনীতিবিদ পেলোসি। তবে তার সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সমর্থন দেননি। এদিকে পেলোসির তাইওয়ান সফরে ক্ষুব্ধ চীন। এ সফরকে বড় ধরনের উসকানি মনে করছে বেইজিং। এর পরিণতি ভালো হবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে।

রাশিয়া ও চীন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছে, পেলোসির সফর উসকানিমূলক এবং তা এ অঞ্চলের জন্য অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। পেলোসির তাইওয়ান সফরের তীব্র নিন্দা এবং একে এক চীননীতির গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে চীন। বেইজিং বলেছে, এই সফর চীন-মার্কিন সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রকে আগুন নিয়ে না খেলার ব্যাপারে সতর্ক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিং।

পেলোসির সফরকে কেন্দ্র করে তাইওয়ান প্রণালিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে। গত সোম ও মঙ্গলবার তাইওয়ান প্রণালির মধ্যবর্তী অঘোষিত সীমানায় একাধিক চীনা যুদ্ধবিমান উড়তে দেখা যায়। এদিকে ওয়াশিংটন তাইওয়ানের উত্তর উপকূলে চারটি যুদ্ধজাহাজ ও একটি বিমানবাহী জাহাজ পাঠিয়েছে।

দীর্ঘদিনের ‘শত্রু’ পেলোসির এই সফর নিয়ে অনেক গা জ্বলা রয়েছে চীনের। কারণ, তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড মনে করে বেইজিং। প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এর দখল নিতে চায়। কিন্তু তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র মনে করে। আর দীর্ঘদিন ধরেই তাইওয়ানকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

তবে চীনের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ থেকে বাইডেন প্রশাসন পেলোসির এখন তাইওয়ান সফরে যাওয়া উচিত নয় বলে পরামর্শ দিয়েছিল। তবে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, যেখানে খুশি যাওয়ার অধিকারের মতো তাইওয়ান সফরের অধিকার আছে ন্যান্সি পেলোসির।

তাইওয়ানের আরো পণ্য নিষিদ্ধ করল চীন : যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির সফরের জের ধরে চীনের বাজারে তাইওয়ানের রপ্তানিনিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। পেলোসির এ সফর ঘিরে আগে থেকেই কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছিল চীন।

বুধবার (৩ আগস্ট) সকালে তাইওয়ান থেকে লেবুজাতীয় ফল ও দুই ধরনের মাছ আমদানি তাৎক্ষণিক নিষিদ্ধ করে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে দ্বীপটিতে বালু রপ্তানিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিস্কুট, কনফেকশনারিসহ অন্যান্য পণ্যেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল বেইজিং।

চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের গভীর বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তাইওয়ানের রপ্তানির প্রায় ৩০ শতাংশই চীনে হয়ে থাকে। তাইপের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার হলো বেইজিং।

এদিকে পেলোসির চীন সফরের প্রতিবাদ জানাতে বেইজিংয়ে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নসকে তলব করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী শিয়ে ফেং বলেন, পেলোসির এ সফর ‘অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। কঠিন পরিণতির হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, চীন অলস বসে থাকবে না।

পেলোসির সফর ঘিরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলের জলসীমায় যুদ্ধবিমানবাহী একটি রণতরিসহ চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে চীন। আকাশে চক্কর দিয়েছে চীনা যুদ্ধবিমান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close