জিয়াউদ্দিন রাজু

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

মহানগর আ.লীগে চলছে গতি আনার কাজ

ডিসেম্বরে হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনের আগে ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই সারা দেশে সাংগঠনিক সফরে ব্যস্ত সময় পার করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন এবং নতুন কমিটি গঠনের কাজ চলছে। ভারপ্রাপ্ত আর নিষ্ক্রিয় নেতাদের দিয়ে চলছে সংগঠনগুলো। মহানগর ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ, যুবলীগের মেয়াদ শেষ হয়েছে আট বছর আগে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যক্রম স্থগিত, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই, সংগঠনের নেতারা শুধু দিবসকেন্দ্রিক কিছু অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ। তাই এখন চলছে সংগঠন গোছানোর কাজে নতুন গতি আনার চেষ্টা।

সর্বশেষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মহানগর নেতাদের বর্ধিত সভা হয়। সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা মহানগরের সম্মেলনের ইঙ্গিত দেওয়ার পরই নড়েচড়ে বসেন মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এখন প্রতিদিনই মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কোনো না কোনো ওয়ার্ড ও থানায় সম্মেলন করছেন। নভেম্বরের মধ্যে সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্র থেকে। কিন্তু দলটির সহযোগী সংগঠনের বিষয়ে কারো কোনো উদ্যোগ নেই। সময়মতো কমিটি না হওয়ায় এসব সংগঠনের পদপ্রত্যাশী অনেক নেতাই দলীয় পরিচয় দিতে পারছেন না। দলে থেকেও পদের পরিচয় না থাকায় হতাশ সংগঠনগুলোর নেতারা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে মহানগর ছাত্রলীগের উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে দুই বছরমেয়াদি সংগঠনের মেয়াদ শেষ হয় গত বছরই। কিন্তু এখনো সম্মেলনের কোনো প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে না। উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা দীর্ঘদিন পদে থাকায় নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। মাঝে ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতির মো. ইব্রাহিম হোসেনকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদককে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছে। যদিও তারা এখনো স্ব-পদে রয়েছেন।

এদিকে মহানগর যুবলীগের অবস্থা এখন বেশ নাজুক। কেন্দ্রীয় নেতারাও ‘বিতর্কে জর্জরিত’, ঢাকা মহানগরে নজর দিচ্ছেন না। পুরোনো কমিটি দিয়ে মহানগর চালাচ্ছে যুবলীগ। শুধু তাণ্ডই নয়, বর্তমান কমিটির দুটি শীর্ষ চার পদের তিনটি চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে। ২০১৩ সালে মিল্কী হত্যার পর পলাতক থাকেন ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফ। পরে দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান এইচ এম রেজাউল করিম রেজা। ক্যাসিনো-কাণ্ডে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেপ্তার হলে মাইনউদ্দিন রানাকে দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল কেন্দ্রীয় যুবলীগে পদ পাওয়ার পর জাকির হোসেন বাবুল ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান। এদিকে সম্মেলন না হওয়ায় মহানগর যুবলীগের পদপ্রত্যাশীরা প্রায় আশা ছেড়ে বসে আছেন। অনেকে আওয়ামী লীগের অন্য কোনো সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির কথাও ভাবছেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি। তবে কবে কী করব, তা এখনো বলতে পারছি না।’

জানা গেছে, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পরপরই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আর মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি স্থগিত করা হয়। গত জুলাই মাসের ২৮ তারিখে সব কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরের ওয়ার্ড, থানা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। মহানগরের ওয়ার্ড, থানা কমিটি বিলুপ্ত করায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে নেতাকর্মীদের মনে তেমন তোড়জোড় নেই। যতিও গত শুক্রবার রাতে নগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটির একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় দপ্তরে। তবে এখনো মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের দায়িত্ববিষয়ক কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই নেতৃত্বশূন্যই বলা চলে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, সব ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঢাকার দুই মহানগরের সব কমিটি দ্রুত দেওয়া হবে।

এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলনের আড়াই মাস পার হয়ে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনটি। সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি পদে ‘বিতর্কিত’ তাজরীন ফ্যাশন গার্মেন্টের কর্ণধার দোলোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ‘বহুল বিতর্কিত’ আবদুল জলিলের নাম ঘোষণা করায় সংগঠনে ও সংগঠনের বাইরে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গত ২২ মে মৎস্যজীবী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কমিটির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলেও বলেছিলেন।

মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের দিনই ২০১৭ সালে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটি গঠন হয়। কেন্দ্রের ওই কমিটির মতোই এখানেও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি চলছে। দিবসভিত্তিক কার্যক্রম ছাড়া এই সংগঠনের মহানগর শাখার তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।

মহিলা আওয়ামী লীগের মতোই ২০১৭ সালে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগরের কমিটি হয়। এরপর আর মহানগরে সম্মেলনের কথা ভাবেনি সংগঠনটি। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অর্থাৎ ২০০২ সালের পর শীর্ষ দুই পদে নাজমা আক্তার এবং অপু উকিল ছাড়া আর কেউ আসেননি। ২০২০ সালে পাপিয়া-কাণ্ডে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সংগঠনটি। এমন অবস্থায় সংগঠনটি কেন্দ্রীয় সম্মেলনের কথা ভাবলেও মহানগরের বিষয়ে তাদের তেমন কোনো ভাবনা নেই।

এ ছাড়া ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের অবস্থাও নাজুক। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটিরও তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। কিছুদিন আগে দুই গ্রুপে বিভক্তি ছিল। পৃথক পৃথক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তারা সংগঠনের কাজ করতেন। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব থেকে নীরব বিরোধে চলে যায় সংগঠনটি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘ঢাকা শহরে এখন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত ও শক্তিশালী। নগরের উত্তরে ইউনিট কমিটি শেষ করে থানা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো করা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই ওয়ার্ড এবং থানা কমিটি শেষ হবে। সহযোগী সংগঠনগুলোকে আমরা নির্দেশ দিয়েছি। আওয়ামী লীগের মতো করে অনতিবিলম্বে সব সহযোগী সংগঠনের ইউনিট, ওয়ার্ড এবং থানা কমিটিগুলো করে ফেলার জন্য জোরেশোরে কাজ চলছে। আশা করি তারা সময়মতো কমিটিগুলো করতে পারবেন।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close