নুর নবী রবিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

  ০৩ আগস্ট, ২০২২

অবরোধে দুদিন অচল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশের পর ক্যাম্পাস অবরোধ করেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখের গেট তালাবদ্ধ করে দেন। ফলে গত ২ দিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো শিক্ষক বাস শহরে যেতে পারেনি। শাটল ট্রেন চলাচল করেনি। বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের যাতায়াত। কোনো বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়নি ক্লাস। স্থগিত হয়েছে পরীক্ষা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ছাত্রলীগের কমিটি প্রকাশ : রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত প্যাডে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। যা ছাত্রলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। ৩৭৫ সদস্যের এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে ৬৯ জন সহসভাপতি, ১২ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ১১ জন সাংগঠনিক সম্পাদক রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেয়ে পদধারীরা উচ্ছ্বসিত হলেও ঘোষিত কমিটিতে পদবাণিজ্য ও অছাত্রদের রাখার অভিযোগ এনে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয়। মূল ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে তারা।

শাটল ট্রেনের চালক অপহরণ : পরদিন সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চলাচলরত শাটল ট্রেনের লোকো মাস্টার (চালক) এল এম আবু তাহের ও দায়িত্বরত গার্ড এমাদুল হককে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য ঘোষিত ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদবঞ্চিতরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১ আগস্ট) সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে নগরের ঝাউতলা স্টেশন থেকে তাদের অপহরণ করা হয়। পরে ৫ ঘণ্টা পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম পুরাতন রেলস্টেশন থেকে ১৩১ নম্বর শাটল ট্রেন ছেড়ে যায়। ট্রেনটি ঝাউতলা এলাকায় পৌঁছালে একটি সাদা প্রাইভেট কারে কয়েকজন যুবক এসে ট্রেনের গার্ড ও লোকো মাস্টারকে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনার সময় সহকারী লোকো মাস্টার পালিয়ে যান।

অনুষ্ঠিত হয়নি ক্লাস পরীক্ষা : দুই দিন ধরে ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষক বাস ও শাটল ট্রেন চলাচল করতে না পারায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। ৪টি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চবির ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চৌধুরী আমির মোহাম্মদ মুছা। তিনি জানান, বিক্ষোভের কারণে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যেহেতু ক্যাম্পাসে আসতে পারেননি, তাই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ওই ৪ বিভাগ হলো, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস, ফাইন্যান্স বিভাগ ও ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ।

অবরোধকারীদের ৫ দাবি : ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা সোমবার বিকাল ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, মৌলবাদী জামায়াত-শিবিরের ক্যান্টনমেন্টকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে বিনির্মাণ করেছেন। ত্যাগী কর্মীদের বাদ দিয়ে বিবাহিত অছাত্র জামায়াত-শিবির ব্যাকগ্রাউন্ড কর্মীদের দিয়ে, অপরাধীদের দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এরই প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবরোধের ডাক দিই। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি চলমান থাকবে এবং ইয়াবা ব্যবসায়ী ইলিয়াছকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। এ সময় তারা ৫টি দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো মো. ইলিয়াসকে (নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি বর্ধিত করতে হবে। সকল অছাত্র, শিবির, বিএনপি-জামায়াত ও বিবাহিত কর্মীদের ঘোষিত কমিটি থেকে বাদ দিতে হবে। ৫০ জন ত্যাগী, মেধাবী ও নিয়মিত ছাত্রকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে আজকের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে হবে। পদবিতে সিনিয়র জুনিয়র ক্রম ঠিক করতে হবে।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ইংরেজি বিভাগের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা বেলাল বলেন, আমি জাতির পিতার আদর্শের সৈনিক। আমি যাদের রাজনীতিতে এনেছি, তাদের পদ দেওয়া হয়েছে। আমাকে দেওয়া হয়নি। আমি ছাত্রলীগের জন্য জেলও খেটেছি। তারপরও আমার নাম আসেনি। আমাকে বারবার বলা হয়েছে, আমাকে নেতা বানিয়েছে। যারা এক মাসও রাজনীতি করেনি, তাদের নাম এসেছে। আমরা এই কমিটি পুনর্গঠন চাই।

অবরোধ স্থগিত : মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সকাল থেকে অবরোধ চললেও দুপুর ১২টায় কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে ডাকা অবরোধ স্থগিত করেছেন পদবঞ্চিতরা। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন বলে দাবি করছেন তারা। সে সময় জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক খুলে দেন পদবঞ্চিত নেতারা। আন্দোলনকারী পদবঞ্চিত নেতা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের নেতা মহিবুল হাসান নওফেল আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। উনি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। নেতার সম্মানার্থে আমরা চলমান অবরোধ প্রত্যাহার করেছি। যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা কমিটিতে মূল্যায়িত হবে বলে আমি আশাবাদী।

ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেন উপাচার্য : শাটল ট্রেন চালককে অপহরণসহ ক্ষয়ক্ষতিকারী সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) চবি উপাচার্যের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। চবি উপাচার্য বলেন, ছাত্র সংগঠনের কমিটিতে পদণ্ডপদবি না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছিল। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শুরু থেকেই আলোচনা করেছি। আলোচনাসাপেক্ষে তারা অবরোধ থেকে সরে এসেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ নেয়। কিছু হলেই শাটল বন্ধ করে দেয়। সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংবাদ সম্মেলনে চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা অবরোধ প্রত্যাহার করেছে। অতীতেও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত থাকায় অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায়ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close