নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ আগস্ট, ২০২২

ঢাকায় নতুন ৬ মাদক

* উদ্ভাবক ওনাইসি গ্রেপ্তার, তিন মামলা * চেয়েছিলেন মাদকবিজ্ঞানী হতে

দেশে অপ্রচলিত নতুন ছয় মাদক জব্দ হয়েছে। বিদেশ থেকে পার্সেলের মাধ্যমে আনা হতো এগুলো। এসব মাদক হলো- এক্সট্যাসি, হেম্প, মলি, অ্যাডারল এবং ফেন্টানিল। এ ছাড়া তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্টের মাধ্যমে অভিনব পন্থায় তৈরি মাদক ‘কুশ’ জব্দ করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাব। এসব মাদকের কারবার করে আসছিলেন ওনাইসি সাঈদ ওরফে রেয়ার সাঈদ নামের এক উচ্চশিক্ষিত যুবক। তিনি মাদকবিজ্ঞানী হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু শেষমেশ ধরা পড়েন র‌্যাবের হাতে।

মঙ্গলবার (২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাহিনীর লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খোন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব জানিয়েছে, বিভিন্ন অপ্রচলিত ও নতুন মাদক বিক্রি এবং তাপ নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে কুশ তৈরি করতেন সাঈদ। রীতিমতো এসব মাদক নিয়ে তিনি গবেষণা শুরু করেন। এ ছাড়া কুশ মাদক দিয়ে তৈরি করতেন বিশেষ সার। ভবিষ্যতে দেশের বাইরেও কুশ রপ্তানির পরিকল্পনা ছিল তার। এজন্য তার বাসায় কুশ প্লান্টের ফার্ম তৈরি করেন। টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল হিসেবে সাঈদ মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাটের ভেতর তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্ট পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেন। তার প্রতিটি মাদকের বোতলে তাপমাত্রা দেওয়া। কোন বোতলে কোন মাত্রা দিতে হবে, সব উল্লেখ করে রেখেছিলেন। তবে ওনাইসি নিজে মাদক সেবন করেন না। কিন্তু আমেরিকায় পড়াশোনা করার সময় নতুন মাদকের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সেই আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন অপ্রচলিত এক্সট্যাসি আনতেন। কখনো নিজে আবার কখনো পার্সেলের মাধ্যমে আমদানি করতেন। আর মাদকের টাকা পাঠাতেন হুন্ডির মাধ্যমে। এসব মাদক রাজধানীর বিভিন্ন পার্টিতে বিশ্বস্ত সার্কেলের মাধ্যমে সরবরাহ করতেন।

র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে অপ্রচলিত এই নতুন ছয় মাদকদ্রব্যসহ ওনাইসি সাঈদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তার কাছ থেকে ১০১ গ্রাম কুশ, ৬ গ্রাম হেম্প, ০.০৫ গ্রাম মলি, ১ গ্রাম ফেন্টানল, ১২৩ পিস এক্সট্যাসি, ২৮ পিস অ্যাডারল ট্যাবলেট, ১৮ গ্রাম কোকেন এবং ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও অর্ধলক্ষাধিক ডলার জব্দ করা হয়। পাশাপাশি কুশ তৈরির সরঞ্জামও জব্দ করা হয়।

খোন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে অপ্রচলিত, তবে বিভিন্ন উন্নত দেশে প্রচলিত এমন কিছু মাদক পার্সেলের মাধ্যমে ঢাকায় এনে বিক্রি করছে। যাতে ধীরে ধীরে যুবসমাজকে মারাত্মক আসক্ত করে তুলছে। এমন গোয়েন্দা নজরদারির পর গুলশান এলাকা থেকে ওনাইসি সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্টের মাধ্যমে অভিনব পন্থায় বিদেশি প্রজাতির কুশ তৈরির প্লান্ট ও সেটআপ জব্দ করা হয়।

নতুন মাদকের আমদানি, প্রক্রিয়াজাতের বিষয়টি তদন্ত করবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এই নতুন মাদকের আমদানি করতে গিয়ে বিদেশে মুদ্রা অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন তিনি। সবমিলে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, মাদক মামলা, বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ওনাইসি সাঈদ দেশে একটি স্বনামধন্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে আমেরিকায় যান। সেখানে বিবিএ ও মালয়েশিয়ায় গিয়ে এমবিএ সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সাল থেকে দেশে অবস্থান করছেন।

থাইল্যান্ডে থাকা অবস্থায় ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের ফয়সাল নামক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। যার মাধ্যমে সাঈদ নতুন মাদক সম্পর্কে জানতে পারেন।

ওনাইসি সাঈদ প্রায় ৪ বছর ধরে এক্সট্যাসিসহ অন্য উচ্চমূল্যের মাদকের কারবারে জড়িত। দেশে তার ৭-৮ জন সহযোগী আছে।

র‌্যাব আরো জানায়, সাঈদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল নতুন মাদক তৈরি করা। সে অনুযায়ী মাদক প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে উন্নত দেশে সরবরাহের লক্ষ্যে কুশ প্লান্টের ফার্ম তৈরি করেছেন। টেস্ট অ্যান্ড ট্রায়াল হিসেবে সাত মাস আগে মোহাম্মদপুরে ভাড়া ফ্ল্যাটের ভেতরে তাপ নিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্ট পদ্ধতিতে চাষাবাদ শুরু করেন। সেই ফার্ম থেকে একবার হারভেস্ট ও পরে প্রসেস করে কুশ মাদক ?উৎপাদন করেন; যা দেশের বিভিন্ন মাদকাসক্তের কাছে বিক্রি করতেন। নতুন মাদক প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে বিক্রি করে লাভবান হওয়াই ছিল তার লক্ষ্য।

কীভাবে আসত এসব মাদক : বাংলাদেশে অপ্রচলিত মাদক এক্সট্যাসি, কুশ, হেম্প এবং মলি, অ্যাডারল, ফেন্টানিলসহ অন্য মাদক পার্সেলের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হতো। কখনো ওনাইসি নিজে বিদেশ থেকে লাগেজে করে আনতেন। আবার বিদেশ থেকে পার্সেলের মাধ্যমে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবদের নাম ঠিকানা পাঠাতেন। পরে এসব মাদকের টাকা হুন্ডির মাধ্যমে সরবরাহ করতেন। বিদেশে পার্সেলের মাধ্যমে ওনাইসি তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের নামণ্ডঠিকানায় পাঠাতেন। তবে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আনা সেই মাদকের পার্সেল নিজে রিসিভ করেন। আত্মীয়স্বজনরা মনে করতেন, উন্নত দেশে তার যাতায়াত, পার্সেল আসা স্বাভাবিক। তবে পার্সেলে কী থাকত, সে সম্পর্কে জানতেন না তারা।

নতুন মাদকের প্রভাব কেমন : আফিমের চেয়ে ৫০ গুণ ফেন্টালিন, মারিজুয়ানার চেয়ে ৫০ গুণ শক্তিশালী কুশ মাদকে। এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘আমরা জব্দ করা সব মাদক ল্যাবে পরীক্ষা করব। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি, আফিমের চেয়ে ৫০ গুণ শক্তিশালী হচ্ছে জব্দ ফেন্টালিন। আর মারিজুয়ানার চেয়ে ১২ গুণ শক্তিশালী মাদক কুশ। এসব মাদক সেবনে স্নায়ু উদ্দীপনা তৈরি করে। ৪-৫ ঘণ্টার জন্য পার্টির মুড তৈরি করে। ১০০ গ্রাম কুশ মাদক বিক্রি করতেন ৩ লাখ টাকায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close