প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৭ জুলাই, ২০২২

বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হন

প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে দেশবাসীকে যেকোনো ধরনের আলোকসজ্জা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু এখন ভর্তুকি বহুগুণ বেড়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং আমেরিকা ও ইউরোপের স্যাংশনের কারণে তেল, ডিজেল, এলএনজিসহ (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। ফলে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালিয়ে রাখা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে গেছে। তাই আমাদের লোডশেডিং দিতে হবে এবং বিদ্যুতের উৎপাদন সীমিত করতে হবে। যতটুকু পারা যায় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, বিপণিবিতান, দোকানপাট, অফিস-আদালত এবং বাড়িঘরে আলোকসজ্জা থেকে বিরত থাকতে হবে।’ গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ এবং ‘শেখ জামাল ডরমেটরি ও রোজী জামাল ডরমেটরির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে নকিয়ার তৈরি স্মার্টফোন ব্যবহার করে এ উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।

এ সময় সরকারপ্রধান এলাকাভিত্তিক লোডশেডিংয়ের জন্য রুটিন তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, কোন এলাকায় কত সময় লোডশেডিং দেওয়া হবে, তার একটি রুটিন তৈরি করুন। কারণ জনগণ যেন সেজন্য প্রস্তুত হতে পারে এবং তাদের দুর্ভোগ কমানো যায়।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, ফার্নেস অয়েলের দাম ছিল মাত্র ৭০৮ টাকা, সেটা ইউক্রেনের যুদ্ধের পর হয়ে গেছে ১ হাজার ৮০ টাকা। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলএনজি এমএমবিটিইউ ১০ ডলারে কেনা হতো; সেটা এখন ৩৮ ডলার। প্রায় ২৮০ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে। কয়লা ১৮৭ ডলার ছিল, সেটা এখন ২৭৮ ডলার। ৬১ শতাংশ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজেলের লিটার ছিল ৮০ ডলার, সেটা এখন ১৩০-এ চলে এসেছে। শোনা যাচ্ছে এটা নাকি ৩০০ ডলার পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে। অর্থাৎ এখন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বিশ্ব। আমরা অনেক নির্ভরশীল ডিজেলের ওপর, ইতোমধ্যে ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

বর্তমান বাজেটে ৮৪ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভর্তুকি না কমালে সরকার টাকা কোথা থেকে পাবে। ভর্তুকি ছাড়াও সরকার দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে, ভর্তুকি মূল্যে প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে এক কোটি রেশন কার্ড দিয়েছে এবং বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিচ্ছে, যা অনেক ধনী দেশও করেনি।

সরকারপ্রধান সারা দেশে ২৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দেন। যার মধ্যে ২০৫১টি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের অধীনে এবং ৬৬৫টি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এমপিও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার শিক্ষায় বিনিয়োগকে ব্যয়ের পরিবর্তে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করেছে। কারণ তারা বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানভিত্তিক প্রজন্ম তৈরি করতে চায়, যাতে নতুন প্রজন্ম বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলছে তার ফল এ দেশের নতুন প্রজন্ম পাবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা তৈরিতে শেখ কামাল বিজনেস ইনকিউবেটর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বর্তমানে সারা দেশে ৯২টি হাইটেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ৯টি পার্ক স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য ৬৪ জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা মোবাইল এবং ল্যাপটপ উৎপাদনে সহায়ক ১৫৬টিরও বেশি যন্ত্রাংশের ওপর ১ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক হ্রাস করে দিচ্ছি। ফলে বিশ্বের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডের ১৫টি কোম্পানির মোবাইল ফোন সেট আমাদের দেশেই তৈরি হচ্ছে এবং ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। আগামীতে গার্মেন্টস পণ্যের সঙ্গে আমাদের ডিজিটাল ডিভাইসও সমানতালে বাংলাদেশে উৎপাদন এবং রপ্তানি হবে। আর রপ্তানি খাতে আগামীতে এটাই হবে একটি উল্লেখযোগ্য পণ্য, যেটা রপ্তানি করে আমরা অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব। আর সে লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে এবং সমগ্র বাংলাদেশেই সেভাবে প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোনোভাবেই যেন আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে পিছিয়ে না থাকে; সেভাবেই আমরা তাদের প্রযুক্তি শিক্ষার ব্যবস্থা করছি। যেসব অবকাঠামো আমরা তৈরি করছি, তা হবে আগামী প্রজন্মের মেধা, বুদ্ধি, জ্ঞানের বিকাশ কেন্দ্র এবং তাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেমের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠবে জাতির স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। জাতির পিতা সেই উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখে যেতে না পারলেও তার সেই স্বপ্ন পূরণই আমাদের দায়িত্ব।’ খবর বাসসের।

সকালে নির্ধারিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে গণভবনে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি গণভবন, আইসিটি মন্ত্রণালয় ও চুয়েট প্রান্ত থেকে একযোগে অনলাইন প্ল্যাটফরমে হয়। অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

অনুষ্ঠানে আইসিটি মন্ত্রণালয় প্রান্তে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পরিবেশ, বন ও জলবায়ুমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম প্রমুখ।

চুয়েট প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম-৬ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, চুয়েটের শিক্ষক-কর্মকর্তা-শিক্ষার্থী এবং শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উপকারভোগী বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close