নিজস্ব প্রতিবেদক
স্টেশনে রাত কাটিয়ে টিকিট কাটার লড়াই
ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটার জন্য রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল রবিবার ছিল উপচে পড়া ভিড়। অনেকেই এক দিন আগে এসে সারা রাত স্টেশনেই লাইনে অপেক্ষা করছেন টিকিটের জন্য।
গতকাল সকাল ৮টায় কাউন্টারে টিকিট বিতরণ শুরুর কথা থাকলেও আগের দিন শনিবার থেকেই স্টেশনে অবস্থান নেন হাজারো টিকিটপ্রত্যাশী। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড়। টিকিট কেনা যেন রীতিমতো এক যুদ্ধ। রাতভর লাইনে থেকেও বেশির ভাগ টিকিটপ্রত্যাশী টিকিট পাননি।
ঈদের অগ্রিম টিকিটের জন্য দীর্ঘসময় লাইনে থাকতে হচ্ছে। কেউ কেউ ৩০ ঘণ্টা ধরে লাইনেই অপেক্ষা করেছেন। সময় পার করতে তাদের কেউ পত্রিকা পড়েছেন, শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বই বা নোট নিয়ে লাইনে বসেই পড়েছেন। অনেকে আবার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়েও গেছেন। অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম ও দ্বিতীয় দিনেও এমন ভিড় ছিল কমলাপুর ও ঢাকার অন্য রেলস্টেশনে।
পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও আগেভাগেই স্টেশনে এসেছেন অগ্রিম টিকিট কাটার জন্য। তাদেরও অনেকে সারা রাত স্টেশনেই কাটিয়ে দিয়েছেন। রাতভর লাইনে থেকেও টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছেন তারা।
কমলাপুর রেলস্টেশনে গতকাল বিক্রি হয়েছে ৭ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট। মানুষের লাইন বলে দিয়েছে এই দিনের টিকিটের চাহিদা কেমন। যাত্রীদের অভিযোগ, এক ঘণ্টার মধ্যেই উত্তরাঞ্চলের সব ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। বিশেষ করে লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কোনোভাবেই পাওয়া যায়নি।
গতকাল সাতটি স্থান থেকে তৃতীয় দিনের মতো অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আজ সোমবার দেওয়া হবে ৮ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট।
নারী যাত্রীদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ‘রাত থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাচ্ছি না। কিন্তু যাদের একটু লবিং আছে একে-ওকে ধরে চোখের সামনে দিয়ে কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কিছু বলতে গেলেও পুলিশের সদস্যরা আমাদের কিছু বলতে দিচ্ছেন না, আমাদের সরিয়ে দিচ্ছেন। আমরা সাধারণ মানুষ টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছি গতরাত থেকে; আমাদের পরিশ্রমের কোনো দাম নেই।’
আরেকজন নারী টিকিটপ্রত্যাশী বলেন, ‘রোজার ঈদে দেখেছি লাইনে ৮০ সিরিয়াল পর্যন্ত সবাই টিকিট পেয়েছি। কিন্তু এবার ৩০ নম্বর সিরিয়াল পর্যন্ত যেতেই কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের টিকিট সব শেষ। কীভাবে এক ঘণ্টার মধ্যে সব টিকিট শেষ হয়ে যায়?’
এদিকে শান্তিপূর্ণভাবে টিকিট বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও আনসার সদস্যরা। আর কালোবাজারে টিকিট বিক্রি বন্ধে পুলিশের পাশাপাশি রয়েছে র্যাবের উপস্থিতি।
অগ্রিম টিকিট বিক্রি নিয়ে গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘ঢাকা থেকে রবিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত স্টেশনের কাউন্টারে ১২ হাজার ৩০০ টিকিট এবং অনলাইনে ৫ হাজার ৮০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে। ঈদের স্পেশাল ট্রেনের টিকিটও দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু ট্রেনের সংখ্যা সীমিত এবং আসন নির্দিষ্ট, ফলে সবাইকে আমরা টিকিট দিতে পারছি না। রবিবার ২৯ হাজার ৭০০ টিকিটের মধ্যে অর্ধেক কাউন্টারে এবং অর্ধেক অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। যেগুলো টিকিট কাউন্টারে দেওয়া সেখানে নারীদের কাউন্টার, পুরুষের কাউন্টার, যাদের বিশেষ কোটা আছে তাদের কাউন্টার সব মিলে দু-তিনটা কাউন্টারে দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং টিকিট খুব অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে- এটাই স্বাভাবিক।’
অনলাইনে ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সহজের জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, ‘টিকিটের যে চাহিদা তাতে অনলাইনে দুই মিনিটেও টিকিট শেষ হয়ে যেতে পারে।’
চট্টগ্রামে ৩ ঘণ্টায় ৬ ট্রেনের টিকিট শেষ : চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে অগ্রিম টিকিট দেওয়ার তৃতীয় দিনে তিন ঘণ্টারও কম সময়ে ৬ ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। অন্য দুদিনের তুলনায় এ স্টেশনে যাত্রীর চাপ ছিল কয়েক গুণ বেশি। টিকিটপ্রত্যাশীরা গত শনিবার সারা রাতই চট্টগ্রাম স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করেছেন অগ্রিম টিকিটের জন্য। গতকাল সকাল ৮টা থেকে কাউন্টারে ৭ জুলাইয়ের টিকিট দেওয়া হয়। অনলাইনেও একই সময় টিকিট বিক্রি হয়। যাত্রীর চাপের কারণে সার্ভার ডাউন থাকায় অনলাইনে কেউ কেউ টিকিট কাটতে পারেননি বলে জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী বলেন, ‘তূর্ণা নিশিথা, সোনার বাংলা, পাহাড়িকা, উদয়ন, মেঘনা ও বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট বেলা ১১টায় শেষ হয়ে যায়।’
"