নড়াইল প্রতিনিধি

  ০৪ জুলাই, ২০২২

নড়াইলে অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত

গ্রেপ্তার ৪ জনের রিমান্ড সদরের ওসি প্রত্যাহার

নড়াইলে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় প্রতিবেদন দিয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরী গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। এদিকে অধ্যক্ষ হেনস্তার ঘটনায় নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে খুলনায় রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) সংযুক্ত করা হয়েছে।

নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো হয় গত ১৭ জুন। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে শনিবার দিন ঠিক করা হয়েছিল।

তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জুবায়ের তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সাংবাদিকদের জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভিডিও ফুটেজ, এলাকার জনসাধারণের বক্তব্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করেছি।’

প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় তিন সদস্যের কমিটির অন্য দুই সদস্য মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সায়েদুর রহমান ও নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শওকত কবীর উপস্থিত ছিলেন।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিকে দলের নেতৃত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কলেজ শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যে নড়াইল জেলায় সব স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় নড়াইল সদর থানার ওসি মোহাম্মদ শওকত কবীরকে গত শনিবার রাতে প্রত্যাহার করে খুলনায় রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে (আরআরএফ) সংযুক্ত করা হয়েছে।

নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় গতকাল সকালে বলেন, খুলনা উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) কার্যালয় থেকে তাকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শওকত কবীরকে নড়াইল সদর থানা থেকে খুলনায় রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমানকে ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করা হয়। এর আগের দিন ১৭ জুন ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস কলেজশিক্ষক, ওই শিক্ষার্থীর বাবা ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে শিক্ষার্থীকে তাদের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্র ও বহিরাগত কয়েকজন বাধা দেন। তখন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়।

বিকাল ৪টার দিকে শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং ওই শিক্ষার্থীকে কলেজের দ্বিতীয়তলার একটি কক্ষ থেকে বের করা হয়। নিচতলার কলাপসিবল গেটের সামনে আনার পর তাদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় ২৩ জুন পুলিশ সুপার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও ক্রাইম) রিয়াজুল ইসলাম। এই কমিটি তদন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি।

চারজনের রিমান্ড : নড়াইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করা এবং কলেজে হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে চেয়েছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে বিচারিক হাকিম আদালতে আসামিদের হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হলে বিচারক আমাতুল মোর্শেদা তা মঞ্জুর করেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সঞ্জিত কুমার বসু জানান।

তিনি বলেন, চার আসামিকে সকাল ১০টায় জেলা কারাগার থেকে সদর আমলী আদালতে আনা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদুর রহমান প্রত্যেক আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ডের আবেদন মঞ্জুর করেন।

আসামিরা হলেন- মির্জাপুরের সৈয়দ রিমন আলী, মির্জাপুর বাজারের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী শাওন খান, মধ্যপাড়ার মো. মনিরুল ইসলাম ও রহমতউল্লাহ রনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close