নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ জুলাই, ২০২২

যুদ্ধাপরাধী রজব আলী গ্রেপ্তার

যাতায়াত ছিল পাকিস্তানে

যুদ্ধাপরাধী এম আমিনুল হক দালাল আইন বাতিলের সুযোগে আশির দশকে মুক্তি পান। ২০০০ সাল পর্যন্ত তার পাকিস্তানে যাতায়াত ছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব। যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক এই আসামিকে গত শনিবার রাজধানীর কলাবাগান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রবিবার কারওয়ানবাজারে সংবাদ সম্মেলন করে তার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। এম আমিনুল হক ‘আমি আল বদর বলছি’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ধানমন্ডি ও কলাবাগান দুই এলাকাতেই আমিনুল হক পরিচিত ‘রজব আলী’ নামে। ২০১৪ সাল থেকে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় বিভিন্ন বাসায় ভাড়া থাকছিলেন। তাদের খরচ বহন করতেন সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ায় থাকা দুই মেয়ে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রজব আলী স্বীকার করেছেন, একাত্তরে যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানের অনেকের সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। সে তাদের সঙ্গে দেখা করতে মাঝে মধ্যে পাকিস্তান যেত, আর সর্বশেষ ২০০০ সালে পাকিস্তান গিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার আলীনগর গ্রামের রজব আলী ১৯৭০ সালে ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় ইসলামী ছাত্র সংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে এলাকায় ফিরে আল বদর বাহিনী গঠন করেন।

সে সময় অপহরণ, নির্যাতন, লুটপাট, হত্যা, গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকায় ২০১৮ সালে ৫ নভেম্বর রজব আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হয়েছিলেন রজব। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে তিনটি মামলাও হয়েছিল, যাতে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। কিন্তু দালাল আইন বাতিলের সুযোগে মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করে ১৯৮১ সালে রজব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন। পরে ‘আমি আল বদর বলছি’ নামে একটি বই তিনি প্রকাশ করেন।

র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জেল থেকে বের হওয়ার পর ১৯৮২ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে এবং বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকবার পাকিস্তান গমন করেন রজব আলী। এরপর দেশে ফিরে চলে যান কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার আলীনগর গ্রামে। সেখন থেকে ১৯৯৭ সালে ঢাকায় চলে আসেন।’

২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হলে ফের আত্মগোপনে চলে যান রজব। গ্রেপ্তার এড়াতে সে সময় তিনি রাজধানীর ধানমন্ডি ও কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেছেন জানিয়ে র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাধারণত জনসমাগম, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পেতে পারে এমন এমন স্থান এড়িয়ে চলতেন রজব।

কমান্ডার মঈন বলেন, ‘আমি আলবদর বলছি’ ও ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ নামে যে দুটি বই রজব আলী প্রকাশ করেছেন, সেখানেই তিনি নিজেকে ‘আলবদর কমান্ডার’ দাবি করেছেন। সেখানে সে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের শোকাবহ ১৫ আগস্টের দিনসহ সামগ্রিক বিষয়গুলো অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছে।

মঈন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় সরকার ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ বইটি নিষিদ্ধ করে এবং রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় রজবের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়।

মুক্তিযুদ্ধের সময় রজব আলীর ভূমিকা তুলে ধরে এই র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, ‘সে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চন্ডিপুর গ্রামে এবং কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম থানার সদানগর ও সাবিয়ানগর গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুণ্ঠন ও নির্যাতন করে। এ ছাড়া নিরস্ত্র মানুষদের অপহরণ করে স্থানীয় রাজার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতন করে তাদের মেরে ফেলারও অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে এই আল বদর বাহিনীর কমান্ডারের বিরুদ্ধে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close