নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৪ জুলাই, ২০২২

সর্দি জ্বর ডেঙ্গু নিউমোনিয়া করোনা পরীক্ষার পরামর্শ

ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে সর্দি-জ্বর। বাড়ছে করোনা সংক্রমণ, বাড়ছে ডেঙ্গু, এমনকি নিউমোনিয়া। সর্দি জ্বরের ক্ষেত্রে রোগ নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি যা তাতে এখন সর্দি-জ্বর হলে অবহেলা করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।

সর্দি-কাশি-জ্বরের রোগী এখন ঘরে ঘরে। ডেঙ্গু রোগীও বাড়ছে, শিশুদের নিউমোনিয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় যারা জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়েছেন বা হননি সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জনসমাগম এড়িয়ে চলার এবং মাস্ক ব্যবহার করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষা ঋতুতে দেখা যাচ্ছে দিনে বেশ গরম, ঘাম হচ্ছে। বৃষ্টি চলে এলো, গরম থেকে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তাছাড়া বাইরের প্রচণ্ড গরম থেকে ফিরে অনেকে বাসায় বা অফিসে এসিতে বসে যান। এই যে শরীরে গরম আর হঠাৎ ঠাণ্ডার একটা প্রবাহ সেখান থেকেই দেহ চক্রে ব্যাঘাত হয় এবং এখান থেকেই জ্বর-সর্দি চলে আসতে পারে।

তারা বলছেন, যে কেউ যেকোনো সময়েই কমন কোল্ডে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু এখন ডেঙ্গু জ্বর এবং করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে। এখন জ্বর হলে এটা ডেঙ্গু নাকি করোনা নাকি সাধারণ সর্দি-কাশি সেটা বোঝা জরুরি। জ্বর-সর্দি হলে যদি কোভিড আর ডেঙ্গু পরীক্ষাটা করে ফেলা যায় তাহলে কোনো দ্বিধা থাকে না। শুরুতেই যদি পরীক্ষাটা করে নেওয়া যায় তাহলে পরে জটিলতা তৈরি হয় না।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঈদে ভিড়ের মধ্যেই মানুষ যাতায়াত করবে, হাটে পশু বেচাকেনা হবে। যার ফলে সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে আরো ওপরে উঠবে। তবে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কেননা বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকা নিয়েছেন। এরই মধ্যে এন্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। এ বছর করোনা আক্রান্ত হয়ে হসপিটালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা তেমন বেশি না। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে অধিকাংশ শয্যা ফাঁকা আছে। সংক্রমণ সহনীয় মাত্রাতেই রয়ে যাবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব।

চিকিৎসকরা বলেছেন, টিকার কার্যকারিতা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বড় জোর এটি একজন মানুষকে ৬ থেকে ৯ মাস সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তার মানে আমাদের দেহে টিকার কার্যকারিতা কিন্তু আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। অ্যান্টিবডি কমে যাওয়ার কারণেও কিন্তু করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নিলেও বুস্টার ডোজে খুব বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের গাফিলতিভাব চলে এসেছে। দেশে বুস্টার ডোজ কার্যক্রম শুরুর দীর্ঘদিন পার হলেও এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি মানুষ সেটি নেয়নি। টিকা নেওয়ার ব্যাপারেও মানুষের মধ্যে একটা গাফিলতিভাব চলে এসেছে। সবমিলিয়েই সংক্রমণের ঝুঁকিটা বাড়িয়ে তুলছে।

এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বিষয়টি দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, করোনা এখন ঊর্ধ্বমুখী। আমরা কিছুটা চিন্তিত তবে শঙ্কিত নই। আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের হাসপাতালের উন্নয়ন চলমান আছে। হাসপাতালে তেমন রোগী নেই। রোগী এলে চিকিৎসা দেওয়ার পূর্ণ ব্যবস্থা আছে। তবে সংক্রমণ কিছুটা বাড়লেও রোগীদের মধ্যে তেমন কোনো জটিলতা নেই। কারণ আমরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা মানুষদের প্রায় সবাইকেই টিকার আওতায় এনেছি। যে কারণে সংক্রমণ এক শতাংশের নিচে চলে এসেছিল। আমাদের মৃত্যু প্রায় শূন্যের কোঠায়। কিন্তু এখন আবার সংক্রমণের হার ১৫ শতাংশে উঠে এসেছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, করোনায় মন্ত্রণালয়ের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিসেও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের সচেতন হতে হবে। সবাইকেই মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close