নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ জুলাই, ২০২২

ঈদ মৌসুম, ফাঁকা মার্কেট বিক্রেতাদের অলস সময়

কয়েক দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। কিন্তু ঈদের কেনাকাটার জন্য পোশাকের মার্কেটগুলোতে ক্রেতার সমাগম নেই। এমনকি দিনের বেশির ভাগ সময় কোনো ক্রেতা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে তাদের অলস সময় পার করতে হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে এ চিত্র দেখা গেছে গতকাল শুক্রবার। এদিন অফিস-আদালতে সরকারি বন্ধের কারণে বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতার সমাগম ঘটবে বলে আশা ছিল ব্যবসায়ীদের। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকার অধিকাংশ মার্কেটে ক্রেতা নেই। এতে পোশাক ব্যবসায়ী ও কর্মীদের কেউ কেউ গল্প করে সময় পার করছেন। আবার কেউ কেউ মোবাইল ফোনে গেম খেলে কিংবা গান শুনে সময় পার করছেন।

খিলগাঁওয়ের তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট, টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেট, শান্তিনগরের টুইন টাওয়ার মার্কেট, মালিবাগের ফরচুন মার্কেট, মৌচাক মার্কেট, নয়াপল্টনের পলওয়েল মার্কেটের সবকটিতেই ক্রেতা সংকট দেখা গেছে। এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা যেন তীর্থের কাকের মতো ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন। ব্যবসায়ীরা জানান, গত রোজার ঈদে পোশাকের ভালো বেচাকেনা হয়েছে। কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক ভালো ব্যবসা হবে না- এমন ধারণা আগেই ছিল। সে কারণে এবার ব্যবসায়ীরা ঈদকেন্দ্রিক বিনিয়োগ কম করেছেন। তবে যেটুকু প্রত্যাশা ছিল, সেরকম ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না।

তারা বলছেন, সব সময় কোরবানির ঈদে সবার নজর থাকে পশুর হাটের দিকে। এ সময় নতুন পোশাক কম বিক্রি হয়। তার ওপর এবার বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর ফলে খরচের লাগাম টানতে বেশির ভাগ মানুষই হিমশিম খাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে পোশাকের ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে।

রাজধানী সুপার মার্কেটের একটি পোশাকের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, তিনজন বসে গল্প করছেন। তাদের মধ্যে মো. ফজলুর রহমান নামের একজন বলেন, ঈদকেন্দ্রিক আমাদের কোনো বিক্রি নেই। দেখেন, এখানের সব দোকান খালি। কারো বিক্রি নেই। যে বিক্রি হচ্ছে, তা দিয়ে দোকান ভাড়াই উঠবে না। কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক নতুন পোশাক বিক্রি কম হয়। তবে এত কম এর আগে হয়নি। এবার বিক্রি একেবারেই নেই। আমরা খুব কষ্টে আছি। আমাদের কষ্ট কেউ দেখে না। আমাদের কষ্টের কথা কাউকে বলতেও পারি না।

তালতলা সিটি করপোরেশন মার্কেট গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যবসায়ী মোবাইল ফোনে গেম খেলছেন। মো. ফয়সাল নামের ওই ব্যবসায়ী বলেন, এবার ঈদকেন্দ্রিক কোনো বিক্রি নেই। এখন যেমন দেখছেন, দিনের বেশির ভাগ সময় এমন ক্রেতাশূন্যই থাকে। কাপাল ভালো হলে, মাঝে মধ্যে এক-দুজন ক্রেতা পাচ্ছি।

মৌচাক মার্কেটের ব্যবসায়ী ফিরোজের মুখ থেকেও বেরিয়ে আসলো হতাশা। তিনি বলেন, রোজার ঈদে ভালো ব্যবসা হয়েছে। এরপর থেকে আর বিক্রি নেই। দুই মাস ধরে যে বিক্রি হচ্ছে, তাতে দোকান ভাড়ার টাকাই উঠছে না। কয়েক দিন পরেই ঈদ, তারপরও দেখেন সব দোকান ক্রেতাশূন্য পড়ে রয়েছে।

টুইন টাওয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ী শামিম হোসেন বলেন, বিক্রি পরিস্থিতি খুবই খারাপ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ লাগার পর চাল, ডাল থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। এখন জিনিসপত্রের যে দাম, মানুষ সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমাদের ব্যবসায়।

এদিকে, অভিজাত মার্কেট বসুন্ধরা শপিং মলে ক্রেতাদের কিছু আনাগোনা দেখা গেছে। তবে এখানের ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট না। তারা বলছেন, রোজার ঈদে যেমন ক্রেতা ছিল, এখন তার পাঁচ ভাগের এক ভাগও নেই।

বসুন্ধরা শপিং মলে ক্রেতা ফাহমিদা এই প্রতিবেদককে বলেন, ঈদের সময় মার্কেটে যেমন ভিড় থাকে, এবার তেমন ভিড় নেই। ভালো করে ঘুরে ঘুরে পছন্দমতো দুটি থ্রি-পিস কিনতে পেরেছি। দামও তুলনামূলক কম মনে হয়েছে আমার।

এই মার্কেটের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের দোকানের বেশির ভাগ মাল বাইরে থেকে আনা। আমরা ভারত ও পাকিস্তান থেকে মানসম্পন্ন পণ্য নিয়ে আসি। গত রোজার ঈদে খুব ভালো বিক্রি হয়েছিল। কোরবানির ঈদে রোজার মতো বিক্রি হবে না, এ ধারণা আগেই ছিল। তাই এবার খুব বেশি নতুন মাল আনিনি।

তিনি বলেন, এবার যতটুকু বিক্রি হবে ধারণা করেছিলাম, তাও হচ্ছে না। রোজার ঈদের সঙ্গে তুলনা করলে এখন বিক্রি পাঁচ ভাগের এক ভাগও নেই। অল্প কিছু লাভ পেলেই মাল ছেড়ে দিচ্ছি। এমনকি চালান তোলার জন্য কিছু কিছু থ্রি-পিস কেনা দামেও বিক্রি করে দিচ্ছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close