জিয়াউদ্দিন রাজু

  ০২ জুলাই, ২০২২

দুই লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। মেয়াদ শেষের আগেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের ঘোষণা দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তাই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সারা দেশের সাংগঠনিক কাঠামোও জোর কদমে গুছিয়ে আনার তাগাদা রয়েছে। তাছাড়া আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করার নির্দেশনাও রয়েছে। এমন নির্দেশনার আলোকে দলের সাংগঠনিক টিমের সদস্যরা সারা দেশ সফর করছেন।

মূলত শক্তিশালী সংগঠন ও আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি- এ দুটি লক্ষ্য নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা ও উপজেলা সম্মেলনগুলো শেষ করতে কাজ করছেন। তবে এখনো ৩৪ জেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে।

কেন্দ্রীয় সম্মেলন প্রস্তুতির অংশ হিসেবে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা, উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়নে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। দলের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৪৪ জেলার সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। তবে এখনো ৩৪ জেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের নির্ধারিত সময়ের আগে বাকি ৩৪ সাংগঠনিক জেলা এবং ৩৫০ উপজেলা সম্মেলন শেষ করতে হবে। দলীয় প্রধানের নির্দেশনা মোতাবেক দলের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আগামী তিন মাসের মধ্যে বাকি জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠনের কাজ শেষ করবেন। এ লক্ষ্যে ৮টি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা বেশ জোরালোভাবে কাজ করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে প্রস্তুত করতে চাচ্ছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের সভা ও সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে তৃণমূলকে ঢেলে সাজিয়ে শক্তিশালী করা এবং জোরালোভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তাগিদ দেন দলীয় প্রধান। তারই অংশ হিসেবে তৃণমূল পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর সম্মেলন শেষ করার ব্যাপক তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই চলছে বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, জেলা, উপজেলার সম্মেলন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক মহামারি করোনায় আমরা কোনো সাংগঠনিক কাজ করতে পারিনি। আমাদের নেত্রী নতুন করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে এবং তৃণমূলকে শক্তিশালী করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই নির্দেশনার আলোকে কাজ শুরু করেছি।’ তিনি জানান, দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা আছেন, তারা তৃণমূলে সব সময় খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রতিটি শাখায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

শুধু তৃণমূলেই নয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্মেলন শেষ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাকা মহানগরীর উত্তর-দক্ষিণের আওয়ামী লীগ। প্রায় প্রতিদিনই থানা, ওয়ার্ড এবং ইউনিটের সম্মেলন চলছে। ২৬ জুলাই শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা ও এর অন্তর্গত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগরের বেশ কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মির্জা আজম।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি দিচ্ছি। যাতে করে কোনো বিতর্কিত অথবা বিএনপি-জামায়াতের কেউ কমিটিতে আসতে না পারে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, তাই মহানগর আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে হবে।’

মির্জা আজম বলেন, ‘জাতীয় সম্মেলনের আগে আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করতে চাই।’

দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, গত মে মাসে জেলা-উপজেলার সম্মেলন বেশি হয়েছে। কিন্তু চলতি মাসে বন্যা এবং পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে অনেক জেলা-উপজেলার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ঝিনাইদহের সম্মেলন ১৭ মে নিধার্রণ করা হয়েছে। কিন্তু নেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কারণে তা পেছানো হয়েছে। একই অবস্থা চুয়াডাঙ্গায়ও। তিনি বলেন, ‘যশোরের ৪ উপজেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে। তাই আমরা স্থানীয়হ নেতাদের ডেকেছি। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা হচ্ছে। সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদে সবচেয়ে বেশি সম্মেলন হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। নয়টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে আগে দুটি জেলার সম্মেলন করা হয়েছিল। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ছয় জেলা এবং ৭০ উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন করেছেন। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, রাজশাহী বিভাগের ৮৩টি সাংগঠনিক উপজেলার মধ্যে ৭০টির সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। জুলাই মাসের মধ্যেই সব উপজেলার সম্মেলন শেষ করে নির্বাচনী এলাকায় কর্মিসভা করব।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে গত ২৫ মে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য নবায়ন ও কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে। একইভাবে বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তৃণমূল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নবমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা এবং দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন ওবায়দুল কাদের। তিন বছর মেয়াদি এ কমিটির কার্যক্রম শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close