কে এম রুবেল, ফরিদপুর

  ০২ জুলাই, ২০২২

এক্সপ্রেসওয়ে দেখল ভয়াবহ যানজট

১০ ঘণ্টার ভোগান্তি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কও (ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে) পড়ল যানজটের কবলে। ভাঙ্গা-মাওয়া-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে দীর্ঘ ৪ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। টোলপ্লাজায় কাউন্টারের সংখ্যা কম থাকায় দুর্ভোগে পড়েন সড়কে থাকা যাত্রী ও চালকরা। সেখানে আটকা পড়েছে শত শত গাড়ি। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ভাঙ্গা উপজেলার বগাইল টোলপ্লাজায় চারটি কাইন্টারে টোল আদায়ের পর যানজট শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। সামনে ঈদ, তার ওপর শুক্রবার ছুটির দিন, রাজধানী থেকে দক্ষিণে ছুটছে মানুষ। এরই মধ্যে প্রস্তুতি ছাড়াই এক্সপ্রেসওয়ে টোল আদায় শুরু করলে ঘটে বিপত্তি। এন্ট্রি ও এক্সিট দুই পাশের সড়কেই জমে যায় সারি সারি যানবাহন। রাত ২টায় শুরু হওয়া এই যানযট নিরসন করতে সময় লেগে যায় ১০ ঘণ্টা। এতে ভোগান্তির শেষ ছিল না হাজারো মানুষের।

রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া পরিবহনগুলো শুরুতে ৩টি লেন দিয়ে গেলেও শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চালু হওয়া ৭টি লেনের ৫টি দিয়েই টোলপ্লাজা পেরিয়ে যায় সেগুলো, ফলে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বগাইল টোলপ্লাাজায় কর্মরত এক্সপ্রেসওয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুমিনুর রহমান জানান, টোলপ্লাজার ১০টি লেনের ৭টি এরই মধ্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, তাতেই পরিস্থিতি পুরো নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে।

টোল আদায়ের বুথগুলো স্থাপনে কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হওয়ার কারণে যাত্রীদের দীর্ঘ সময়ের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে মুমিনুর বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ের জন্য আর যানজট সৃষ্টি হবে না।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি হামিদুর রহমান বলেন, গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই বগাইল টোলপ্লাাজায় কর্মরত এক্সপ্রেসওয়ের কর্মীদের সব ধরনের সহায়তা করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগলেও কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

বগাইল টোলপ্লাজার ইনচার্জ ফারুক হোসেন বলেন, এখানে টোল আদায়ের ১০টি কাউন্টার রয়েছে। তবে প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা ফ্লাইওভারমুখী পয়েন্টে তিনটি কাউন্টার এবং বিপরীত দিকে পদ্মা সেতু অভিমুখী সড়কের একটি কাউন্টার দিয়ে টোল আদায় শুরু হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের টোলপ্লাজার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু হোসেন জাকারিয়া বলেন, নতুন করে তিনটি বুথ চালু করায় যানজট কমেছে।

গত শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত রবিবার ভোর থেকে সেতু দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচল শুরু করে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে এক্সপ্রেসওয়ে টোলপ্লজায় টোল আদায় শুরু হয়।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি হামিদউদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে আউটের জন্য তিনটি এবং সেতুতে ইনের জন্য একটি কাউন্টার চালু করা হয় বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে। এতে সেখানে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে সেখানে গাড়ি চালক ও যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় তাদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাদানুবাদ হলে ১১টার দিকে কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এতে ৫টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

বরগুনা থেকে ঢাকাগামী যাত্রী আজিজ আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা ফেরি, লঞ্চ দিয়ে পদ্মা পার হয়েছি। এখন পদ্মা সেতু হয়েছে। দ্রুত ঢাকা যাওয়ার কথা। কিন্তু রাত থেকে টোলপ্লজায় আটকে আছি কয়েক ঘণ্টা।’

পটুয়াখালী থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন কলেজছাত্র আবদুর রহিম এবং ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার বলেন, প্রথমবার পদ্মা সেতু পার হতেই তারা ভোগান্তির শিকার হন। আগে থেকে পরিকল্পনা করে টোল আদায় শুরু করলে এভাবে যাত্রীদের ভোগান্তি হতো না।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ভাঙ্গাগামী ৫৫ কিলোমিটার এই এক্সপ্রেসওয়ের নাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক। পদ্মা সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিয়া এলাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার এই মহাসড়ক ব্যবহার করলে একটি বড় বাসকে টোল দিতে হবে ২০০ টাকা, মিনিবাস ১১০, মাইক্রোবাস ৯০, প্রাইভেটকার ৫৫ ও মোটরসাইকেল ১০ টাকা। এ ছাড়া ট্রাকের ক্ষেত্রে ট্রেইলর ট্রাকের (সবচেয়ে বড় ট্রাক) টোল ধরা হয়েছে ৬৭৫ টাকা, ভারী ট্রাক ৪৪০ টাকা এবং মাঝারি আকারের ট্রাক ২২০ টাকা।

ঢাকা থেকে বরিশালগামী ব্যক্তিগত গাড়ির চালক মো. তানভীর জামান (২৯) বলেন, এখানে সকালে ভিড়ের কথা শুনেছিলাম। টোলপ্লাজায় সকালের ভিড় কিছুটা কমেছে। ২৫ মিনিটে আমরা টোল বুথের নাগাল পেয়েছি।

বরিশালগামী ট্রাকচালক হাসমতউল্লাহ বলেন, অনেকক্ষণ এখানে জ্যামে আটকে আছি। পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গার বগাইল টোলপ্লাজার দুই কিলোমিটার আগে যানবাহনের চাপে আটকা পড়েছিলাম। টোলপ্লাজার কাছে আসতে ৪৫ মিনিট সময় লেগেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close