নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ জুলাই, ২০২২

বিক্রির শুরুতেই শেষ ট্রেনের টিকিট

* সাড়ে ৫ ঘণ্টায় বিক্রি ৫৭ হাজারের বেশি * ভোগান্তিতে নারীরা

ঈদযাত্রায় রেলের আগাম টিকিট পেতে কমলাপুর রেলস্টেশনে মানুষের ঢল নেমেছে। টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার প্রথম সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায় সারা দেশে ট্রেনের ৫৭ হাজার ৬৪৩টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ভোর থেকেই কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। এদিকে ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ‘রেলসেবা’ অ্যাপ চালু করলেও কাটেনি অনলাইন বিড়ম্বনা। বিক্রি শুরু হতেই শেষ হয়ে যায় ৫ জুলাইয়ের টিকিট।

এদিন সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকেই কাউন্টারের সামনে ভিড় করেন টিকিটপ্রতাশীরা। উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যেই ভ্যাপসা গরমে নাকাল যাত্রীরা। নারীদের একটি কাউন্টার হওয়ায় দুর্ভোগের শেষ ছিল না তাদেরও।

গতবারের সংকট কাটাতে অনলাইনে এবার ওয়েবসাইট ছাড়াও ‘রেল সেবা’ অ্যাপ চালু করেছে সহজ ডট কম। এতেও কোনো উন্নতি নেই পরিস্থিতির। বিক্রি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ যাত্রীদের। চাহিদার তুলনায় অনলাইনে বরাদ্দ কম থাকায় অনেকেই টিকিট পাচ্ছেন না বলে দায়সারা জবাব রেলওয়ের।

এদিকে, ভোগান্তি কমাতে সাতটি স্থান থেকে বিক্রি হয় টিকিট। প্রতিদিন বিক্রি হবে প্রায় ২৯ হাজার। যার ৫০ শতাংশ কাউন্টার আর ৫০ শতাংশ অনলাইনে। এ বার ছয়টি ঈদ স্পেশাল ট্রেন পরিচালনা করবে রেলওয়ে।

এবার প্রথম দিনে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন নারীরা। একে তো দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট, তার ওপর ছেলে কোলে; আবার লাইনে ছিল না শৃঙ্খলা। সামনে-পেছনের সব লাইন মিলেমিশে একাকার। কমলাপুর রেলস্টেশনে পুরো উত্তরাঞ্চলগামী আন্তনগর ও বী. মু. সি. ই (পঞ্চগড়) ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট দেওয়া হয়। এখানে ৯ থেকে ১৮ নম্বর পর্যন্ত মোট ১০টি কাউন্টারে টিকিট বিক্রি হয়। তার মধ্যে মাত্র একটি কাউন্টার থেকে দেওয়া হয় নারীদের টিকিট। নারীদের ১৮ নম্বর থেকে টিকিট দেওয়া হলেও ১৯ ও ২০ নম্বর কাউন্টার বন্ধ ছিল। নারীরা বলছেন, ১৯ ও ২০ নম্বর কাউন্টার থেকেও তাদের টিকিট দেওয়া হলে তারা ভোগান্তিতে পড়তেন না।

দেখা যায়, কমলাপুর রেলস্টেশনে পুরুষদের জন্য ৯টি কাউন্টার থাকলেও নারীদের জন্য ছিল একটি। কাউন্টার একটি হলেও নারীদের সংখ্যা বেশি থাকায় লাইন ছিল পাঁচটি। কিন্তু একদম কাউন্টারের সামনে সেসব লাইন অনেকটাই একাকার হয়ে যেতে দেখা যায়। তাতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে এবং পর্যাপ্ত বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা না থাকায় বেশ কয়েক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করেন। বসার ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই ফ্লোরে বসে পড়েন। গরমে তারা অঝোরে ঘামেন এবং অনেকের পোশাক অর্ধেক ভিজে যায়।

টিকিট কাটতে আসা নাসিমা আক্তার বলেন, ‘শুধু একটা কাউন্টার থেকে নারীদের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। দুটি কাউন্টারে টিকিট দিলে ভিড় কম হতো, ভোগান্তিও কম হতো।’

নারীদের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি ছিল অনেকটাই ধীরগতির। নওগাঁর শান্তাহারে যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে আসা সাজেদা বেগম বলেন, ‘সকাল ৭টায় এসেছি। তিন ঘণ্টায় তিন হাতও এগোতে পারিনি।’

নারীদের লাইনে কোনো শৃঙ্খলা নেই এবং তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘নারীদের লাইনে শৃঙ্খলা রাখার জন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। তারা নিজেরা যদি না মানেন তাহলে কী করা। পুরুষেরা সাতটি কাউন্টারে দাঁড়িয়েছেন। প্রত্যেক কাউন্টারে আলাদা এলাকার টিকিট দেওয়া হচ্ছে। নারীরা সাতটি কাউন্টারের টিকিট একটি কাউন্টারে পাচ্ছেন। দুই কাউন্টার হলে সাত কাউন্টারের টিকিট এক জায়গায় পাবেন না নারীরা।

গতকাল ৫ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি করা হয়। আজ হবে ৬ জুলাইয়ের, কাল হবে ৭ জুলাইয়ের, ৪ জুলাই হবে ৮ জুলাইয়ের এবং ৫ জুলাই হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি।

জানা যায়, বিভিন্ন স্টেশনের কাউন্টার থেকে ৩০ হাজার ৯২৭টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। আর অনলাইনে ওয়েবসাইট ও অ্যাপে বিক্রি হয়েছে ২৬ হাজার ৭১৬টি টিকিট। ৫ জুলাইয়ের ট্রেনের (৩৪টি আন্তঃনগর) আসন ২৬ হাজার ৬১৩টি। এর অর্ধেক ঢাকার কমলাপুর স্টেশনসহ ছয়টি স্থান থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। বাকি অর্ধেক বিক্রি করা হচ্ছে ওয়েব ও অ্যাপে।

ঢাকার টিকিটের কতটি বিক্রি হয়েছে তা জানাতে পারেননি সহজ মুখপাত্র ফারহাদ আহমেদ। তার ভাষ্য, সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রির শুরুর প্রথম মিনিটে চার লাখ হিট হয়। টিকিটের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০ গুণ। অনলাইন ও কাউন্টারের অধিকাংশ যাত্রী টিকিট পাচ্ছেন না। এসি ও কেবিনের টিকিট সকালে বিক্রি শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close