নিজস্ব প্রতিবেদক
শনাক্ত ১৮৯৭ মৃত্যু বেড়ে ৫
দেশে আবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। গত জুনের ৩ তারিখ থেকে ধারাবাহিকভাবে শনাক্ত হার বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত) ১ হাজার ৮৯৭ জন ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগী দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮২। এ সময় মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের; যা গত ১৬ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল শুক্রবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় ১২ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করে ১ হাজার ৮৯৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগের টানা চার দিন দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজারের বেশি ছিল। গত সোমবার দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই হাজার ছাড়ায়। সেদিন ২ হাজার ১০১ জন শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মঙ্গলবার ২ হাজার ৮৭ জন, বুধবার ২ হাজার ২৪১ জন এবং বৃহস্পতিবার ২ হাজার ১৮৩ জন রোগী শনাক্ত হয়। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮২ জন। তাদের মধ্যে ২৯ হাজার ১৫৪ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৪৮ জন কোভিড রোগী। তাদের নিয়ে ১৯ লাখ ৭ হাজার ৭৫৭ জন সেরে উঠলেন।
এর আগে গত ৮ মার্চ এক দিনে সাতজনের মৃত্যু হয়েছিল। ১১ মার্চ তা নেমে এসেছিল পাঁচজনে। মাঝের সময়টায় দৈনিক মৃত্যু এর নিচেই ছিল। টানা ২০ দিন কোভিডে মৃত্যুহীনও ছিল বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নির্দিষ্ট একটা সময় পর কমে আসাও সংক্রমণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থায় টিকার বাইরে থাকা মানুষকে দ্রুত ভ্যাকসিন নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
দীর্ঘ একটা সময় শনাক্তের হার এক শতাংশের নিচে থাকলেও বর্তমানে তা ছাড়িয়েছে ১৫ শতাংশ। তবে আশার কথা হচ্ছে, যে হারে শনাক্ত বাড়ছে, সে তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা অনেক কম।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ওমিক্রনের সাব ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুতই সংক্রমণশীল। একজন আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ১০ জন সংক্রমিত হতে পারে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় হচ্ছে, প্রচলিত যে টিকা নিচ্ছি, সেটাকে অতিক্রম করে আক্রান্ত করছে সাব ভ্যারিয়েন্ট বিএফোর এবং বিএফাইভ। তার মানে, করোনার টিকাগুলো সাব ভ্যারিয়েন্টের ওপর কোনো কাজই করে না। এ ছাড়া সংক্রমণ বাড়ার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে মানুষের উদাসীনতাকেও দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপট কমলে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে আসে। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এক পর্যায়ে ২৬ মার্চ তা একশর নিচে নেমে যায়। কিন্তু গত ২২ মের পর থেকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোস্তাফা আজিজ সুমন বলেন, যদিও করোনার সংক্রমণ অনুযায়ী মানুষ সে হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে না; কিন্তু যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। তাই করোনার যে ঢেউ, সেটাকে সবারই বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক এ বি এম আবদুুল্লাহ বলেন, যারা টিকা নেননি, তারা অবশ্যই টিকা নেবেন। যারা একটি টিকা নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডোজ নেবেন। আর যারা দুই ডোজ নিয়েছেন, তারা অবশ্যই বুস্টার ডোজ নেবেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জ্বর, ঠান্ডা, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত কোভিড পরীক্ষা করানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
"