আবদুল কাইয়ুম, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জে ফের পানি নতুন বন্যার আশঙ্কা
সুনামগঞ্জে আবারও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করেছে। পাহাড়ি ঢলে বাড়তে শুরু করেছে জেলার নদ-নদীর পানি। এতে নতুন করে বড় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বন্যার পানিতে অগভীর নলকূপ তলিয়ে থাকায় খাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া ও
পানিবাহিত রোগ বেড়ে গেছে।
সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার লালপুর এলাকার বাসিন্দা সিরাজ মিয়া বলেন, বন্যার পানি আসার পর থেকেই আমরা পানিবন্দি। এলাকার মানুষ বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা জ্বর-সর্দি, আমাশয়, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি।
সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার সোনাপুর এলাকার বাসিন্দা ফারুক মিয়া বলেন, হাওরের পানিতে মরা হাঁস, মুরগি ও পশুপাখি পচে যাওয়ার দুর্গন্ধ। সেই পানি ব্যবহার করা ছাড়া আমাদের কোনো গতি নেই। এতে আমরা এলাকার মানুষরা বিভিন্ন রোগের আক্রান্ত হচ্ছি।
তিনি বলেন, চারদিকে পানি আর পানি। খাদ্যসামগ্রী যেভাবে এসে আমাদের দিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেভাবে যদি ডাক্তাররা বাড়ি বাড়ি এসে আমাদের দেখে যেতেন তাহলে হয়ত আমাদের পানিবাহিত রোগের কষ্ট লাঘব হতো।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আহম্মদ হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব মহামারি আকারে দেখা যায়নি। ১২৩টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খাবার স্যালাইন, ওষুধ ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ আছে।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ভারতে বৃষ্টি হলে সুনামগঞ্জে পানি বাড়াটা স্বাভাবিক। সুনামগঞ্জের কিছু অঞ্চলে ও উজানে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে আবারও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে এখনো বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। অন্যদিকে ছাতকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতকে বৃষ্টি হয়েছে ১৭০ মিলিমিটার ও সুনামগঞ্জে ৩৫ মিলিমিটার।
সুনামগঞ্জ জেলার মতো সিলেট ও হবিগঞ্জেও বাড়ছে বন্যার পানি। এই অঞ্চলে গত দুই দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল। এলাকায় বন্যার পানি নামতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গন্ধ ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এখন নতুন করে পানি বাড়তে থাকায় এলাকার মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। দুর্ভোগ কমছে না। খাবার নেই, পানি নেই, ত্রাণও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
এলাকায় বানভাসি মানুষ অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন। বন্যাদুর্গত এলাকায় নতুন করে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। গত সপ্তাহের বন্যার জের কাটতে না কাটতেই আবারও বন্যার পানি। এর মাঝে খাদ্য ও নিরাপদ পানি সংকট। স্বাভাবিক চলাচলে চরম দুর্ভোগ। হাস-মুরগি ও গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে রয়েছেন তারা। এলাকায় তিন দিন ধরে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এক দিকে জলাবদ্ধতা অপরদিকে নতুন বানের পানি। বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক এলাকায় কোথাও হাঁটু আবার কোথায় কোমর পানি হয়ে গেছে। অনেক এলাকায় রান্নাঘরে পানি উঠায় চুলায় আগুন জ্বলেনি। বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেক পরিবার চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে জানা গেছে, গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এলাকায় ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত আরো দু-একদিন স্থায়ী হতে পারে।
"