কাইয়ুম আহমেদ

  ৩০ জুন, ২০২২

নতুন স্বপ্ন পাতাল রেল

রাজধানীর যানজট কমাতে আরেক স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, উড়ালসড়ক করার পর এবার পাতাল রেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এটি নির্মাণে কোনো ভোগান্তি হবে না। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মতো এটাও একটা স্বপ্নের প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন হলে যানজট এড়িয়ে নগরবাসী স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবেন। এতে বাঁচবে কর্মঘণ্টা; দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলবে কর্মজীবী মানুষের।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) বলছে, পাতাল রেল নির্মাণে টানেল খননে অত্যাধুনিক টানেল বোরিং মেশিন ব্যবহৃত হয় বলে নির্মাণকালীন জনদুর্ভোগ কম হয়। পরিবেশ বিপর্যয়ও হয় না বললেই চলে। সাবওয়ে নির্মিত হলে জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করবে। এতে ভূমির উপরিভাগে জনসংখ্যার চলাচল কমবে। ঢাকায় যানজট কমে আসবে। সড়কপথে যেখানে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারে, সেখানে পাতাল রেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাপানের সঙ্গে ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের মধ্যে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পে বিনিময় নোট ঋণচুক্তি সই হয়।

নতুন এই মেট্রোরেলের অ্যালাইনমেন্ট হলো,হেমায়েতপুর-বলিয়ারপুর-মধুমতী-আমিনবাজার-গাবতলী-দারুসসালামণ্ডমিরপুর-১-মিরপুর-১০-মিরপুর-১৪-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান-২-নতুনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত। প্রকল্পটিতে ব্যয়ের মধ্যে জাইকা দেবে ৩০ হাজার ৭৫৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২৮-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হবে।

হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী হয়ে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ লাইনটির ১৪ কিলোমিটার হবে পাতাল রুট। বাকি ছয় কিলোমিটার হবে এলিভেটেড (উড়াল) রুট। ফলে একই রুটে পাতাল ও উড়ালব্যবস্থার সমন্বয়ে মেট্রোরেল স্থাপিত হবে।

প্রস্তাবিত এমআরটি রুট-৫ (নর্দার্ন রুট)-এ ১৪টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে ৯টি স্টেশন হবে মাটির নিচে। আর বাকি পাঁচটি স্টেশন থাকবে মাটির ওপরে। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫) নর্দার্ন রুট প্রকল্পের পরিচালক মো. আফতাব হোসেন খান বলেন, প্রকল্পের আওতায় ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হবে পাতাল।

এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেছেন, আগামী অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম প্রান্তিকের মধ্যে পাতাল রেলের ডিপোর ভূমি উন্নয়নের মধ্য দিয়ে নির্মাণকাজ শুরু হবে। এজন্য আমাদের ভূমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

এমএএন সিদ্দিক বলেন, পাতাল রেল মাটির কমবেশি ৩০ মিটার নিচ দিয়ে যাবে। টানেল বোরিং মেশিন দিয়ে এর নির্মাণকাজ চালানো হবে। ভূগর্ভস্থ স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহার হওয়া এই একই মেশিন দিয়ে কর্ণফুলীর নদীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে।

সরকারি ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাতাল মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। পাতাল রেলের বড় অংশের অর্থায়ন হবে দাতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে। কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত কাজ ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কেমন হবে পাতাল রেল : ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বলছে, পাতাল রেল যা মেট্রোরেলের লাইন বা এমআরটি-১ নামেও পরিচিত, সেটি বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যাবে। মেট্রোরেলের মতো এটিও হবে বিদ্যুৎচালিত রেল এবং এটি হবে দূরনিয়ন্ত্রিত ট্রেন। দূরনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে মেট্রোরেল পরিচালনার জন্য থাকবে অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টারও।

শুরুতে এমআরটি-১-এর কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শুরু করার কথা বল হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কাজটি পিছিয়ে যায়। এমআরটি-১-এর রেললাইনে দুটি অংশ থাকবে, প্রথম অংশটি পুরোপুরি পাতাল পথে, দ্বিতীয়টি উড়ালপথ। এই দুই পথের জন্য ১৯টি স্টেশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন থামবে প্রতি আড়াই থেকে সাড়ে তিন মিনিট পরপর। এই রুটে চলাচল করবে ২৫টি ট্রেন, যার প্রতিটি একবারে তিন হাজারের বেশি যাত্রী বহন করবে।

পাতাল পথে যেসব স্টেশন থাকবে তার মধ্যে রয়েছে কমলাপুর, রাজারবাগ, মালিবাগ, রামপুরা, পূর্ব হাতিরঝিল, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুন বাজার, নর্দা, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, বিমানবন্দর। প্ল্যাটফরমে ওঠানামার জন্য উভয় পথের স্টেশনে থাকবে লিফট, সিঁড়ি ও এস্কেলেটর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close