নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ জুন, ২০২২

পদ্মা সেতু উন্মুক্ত অপেক্ষা রেলের

দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে গেছে। তবে রেলপথ বসাতে সময় লাগবে অন্তত ছয় মাস। সড়কপথটি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে যান চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। রেলপথ স্থাপনের কাজ চলাকালে ঝুঁকি এড়াতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি রাখা হতে পারে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, টোলপ্লাজার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, তারা ভিড় সামলাতে পারবে। এ ছাড়া সেতু রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তার জন্যও সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। সেতুতে টোলের হার এরই মধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। মিনিবাসে ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে ২০০০ টাকা এবং বড় বাসে ২৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। ছোট ট্রাকের টোল ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২১০০-২৮০০ টাকা, বড় ট্রাকে ৫৫০০ টাকা। পিকআপের টোল ১২০০ টাকা।

কার ও জিপের টোল ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১৩০০ টাকা। মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে চাইলে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। পদ্মা সেতু হয়ে যাতায়াতকারী বেশির ভাগ পরিবহনের বাস ঢাকার সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাবে।

জানা যায়, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত আলাদা প্রকল্পে নতুন ১৬৯ কিলোমিটার ব্রড গেজ রেলপথ তৈরি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুরুতে পরিকল্পনা ছিল, পদ্মা সেতুতে যেদিন থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হবে সেদিন থেকেই ট্রেন চালানোর। তবে রেল সংযোগ কাজের প্রস্তুতি শেষ না হওয়ায় এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসে সরকার। বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী, রেলপথটির একটি অংশ (ঢাকা-ভাঙ্গা) চালুর লক্ষ্য ধরা হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বরে। আর পুরো রেলপথটি চালু হবে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, সড়কপথ চালুর পর শুরু হবে রেলপথ বসানোর কাজ। কাজটি করবে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। আগামী জুলাইয়ে তাদের সেতুর ওপর রেলপথ বসানোর জন্য সাইট হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, স্প্যানের ভেতরে রেললাইন স্থাপনের সময় সেতুতে কিছুটা ঝাঁকুনি তৈরি হবে। পরামর্শকরা বলছেন, এ ঝাঁকুনিতে যানবাহন চলাচলে তেমন সমস্যা হবে না। তবে পদ্মা সেতুর যে নকশা ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা তাতে বিষয়টি স্পষ্ট করা নেই। আর আমাদের ঠিকাদার (চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড- সিআরইসি) বলছে, যানবাহন চলাচলে সমস্যা হতে পারে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে আমরা পরিকল্পনা করছি রেলপথ বসানোর কাজ চলার সময় সেতুর ওপর যেসব যানবাহন চলবে, সেগুলোর গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ করার। এজন্য আমরা পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব।

রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ চলাকালে সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছিল উল্লেখ করে আফজাল হোসেন আরো বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ ছিল, যখন রেলপথ বসানোর কাজ হবে তখন যান চলাচল বন্ধ রাখার। কিন্তু আমরা যান চলাচল বন্ধ করতে চাইছি না। কারণ চালুর পর এক ঘণ্টার জন্যও যদি যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়, তাহলে সেতুর দুই পাশে দীর্ঘ যানজট দেখা দেবে। জনভোগান্তি তৈরি হবে। এ কারণে আমরা পরিকল্পনা করছি রেলপথ স্থাপনের সিংহভাগ কাজ রাতে বাস্তবায়ন করার। কারণ ওই সময় যানবাহনের চাপ কম থাকবে। একইভাবে যখন সেতুতে রেলপথ স্থাপনের কাজ চলবে, তখন ওপর দিয়ে চলা গাড়ির গতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে বেঁধে দেওয়ার পরিকল্পনাও আমরা করছি।

প্রসঙ্গত, ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। অন্য দিকে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ শতাংশ। একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিনটি আলাদা অংশে বাস্তবায়ন করছে এ প্রকল্প। এর মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৭৭ শতাংশ। ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ। আর ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close