গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৪ জুন, ২০২২

বাড়ছে নৌরুট ও ফেরি

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্র বাড়ছে। যোগ হচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) বহরে নতুন আরো ২০টি ফেরি। এর মধ্যে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১২টি এবং পরবর্তী বছরে বাকি আটটি ফেরি বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করবে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ৫০টির বেশি ফেরি প্রতিনিয়ত চলাচল করছে দেশের বিভিন্ন রুটে। তথ্যমতে, নতুন দুই ধরনের ফেরির একটি ইমপ্রুভ কে টাইপ এবং অন্যটি ইমপ্রুভ ইউটিলিটি টাইপ। কে টাইপ একটি ফেরি তৈরিতে সরকারের লাগছে ২৪ কোটি টাকা। এ ধরণের ১০টি ফেরি কেনা হচ্ছে। দ্বিতীয় টাইপের একটি ফেরির মূল্য নির্ধারণ হয়েছে ১৭ কোটি টাকা, যার সংখ্যা ১০টি। এ হিসেবে ২০টি ফেরি কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ৪১০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, দেশি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে আধুনিক প্রযুক্তিতে এসব ফেরি নির্মিত হচ্ছে। ফলে দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব ভা-ার সমৃদ্ধ হচ্ছে। দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এগুলো তৈরি হওয়ায় এর স্থায়িত্বও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির সংশ্লিষ্টরা।

নৌ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, একটি কে টাইপ ফেরিতে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ছোট-বড় ১৬টি গাড়ি নদী পার করা যাবে। আর ইউটিলিটি ক্যাটাগরিতে একসঙ্গে ১৪টি গাড়ি পার করা যাবে। দেশের স্বপ্নের পদ্মা সেতু আগামীকাল শানিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। সেতু চালুর পর যাতে নিচ দিয়ে ফেরি চলাচল করতে পারে সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নৌ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বাড়ানো হচ্ছে নতুন রুট। যেখানে ফেরি ও নৌযানের সহায়তায় যাত্রীরা সহজেই নদী পারাপার হতে পারবেন। দুর্ভোগ, সময় ও ব্যয় তিনটিই সাশ্রয়ী হবে। কারণ, তৈরি করা হচ্ছে নতুন সাতটি রুট। রুটগুলো হচ্ছে- চিলমারী-রৌমারী, বালাসি-বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ, জৌপুরা-নাজিরগঞ্জ, হাতিয়া-সন্দ্বীপ-নোয়াখালী, চট্টগ্রামণ্ডসন্দ্বীপ এবং ভোলা-পটুয়াখালী। এর জন্য সংশ্লিষ্ট নদীর দুই তীরেই উন্নয়নের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে নৌ মন্ত্রণালয়। নদীর ঘাট স্থাপন বিআইডব্লিউটিএ করলেও সংযোগ সড়কের কাজ করবে সড়ক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র ধরে রাখতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। পদ্মায় সেতু চালু হলেও সেখানে ফেরি চলাচল অব্যহত থাকবে। নতুন নৌপথ তৈরি করে সেখানেও ফেরিসহ নৌযান চলাচল বজায় রাখার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে পুরাতন ফেরির সঙ্গে নতুন আরো ২০টি দুই ধরনের ফেরি কেনা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১২টি টিসির বহরে ফেরি যোগ হবে। বাকি আটটি পরবর্তী বছরে যোগ হবে। এ নিয়ে চলাচল উপযোগী ফেরির সংখ্যা হবে শতাধিক। এটা অনেক আনন্দের। আগে নৌপথ নিয়ে কেউ চিন্তা করত না। তবে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীপথের দিকে সুদৃষ্টি দেওয়ার সুবাদে এই মন্ত্রণালয় এখন আলোচনায় উঠে এসেছে। প্রতিনিয়ত বরাদ্দ বাড়ছে, যা ইতিবাচক।

বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান আহমেদ শামীম আল রাজি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নৌপথকে সর্বদা সচল রাখা এবং নৌপথে ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কার্যকর রাখতে সরকার সার্বক্ষণিক তৎপর আছে। এ লক্ষ্যে নতুন রুট চালু করে ফেরি সার্ভিস বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এর জন্য কর্তৃপক্ষ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকগুলো রুট নির্ধারণ করেছে। এগুলো নিয়ে জরিপ (সার্ভে) কাজ চলছে। এ ছাড়াও আরো কিছু কাজ রয়েছে, যেমন সংযোগ সড়ক স্থাপন, নদীর দুপাড়ে ঘাট স্থাপনসহ নানাবিধ কাজ চলছে।

বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্যিক) এস এম আশিকুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি নতুন ফেরি রুট চালু করার। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে এসব রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে।

বিআইডব্লিউটিসির মুখ্য নৌ নির্মাতা কর্মকর্তা ও ফেরির প্রকল্প পরিচালক জিয়াউল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নতুন যে ফেরি কেনা হচ্ছে সেগুলো দুই ধরনের (ক্যাটাগরি)। একটি ইমপ্রুভ কে টাইপ ফেরি এবং অন্যটি ইমপ্রুভ ইউটিলিটি টাইপ ফেরি। ইমপ্রুভ কে টাইপ ফেরির এক একটির মূল্য ২৪ কোটি টাকা। আর ইমপ্রুভ ইউটিলিটি টাইপ ফেরির এক একটির দাম পড়ছে ১৭ কোটি টাকা। তিনি বলেন, কে টাইপ ফেরিতে এক যাত্রায় যানবাহন পার হতে পারবে ১৪ থেকে ১৬টি এবং ইউটিলিটি ফেরিতে ১০ থেকে ১২টি গাড়ি পারাপার করা যাবে।

প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, দেশীয় শিপ বিল্ডার্স কোম্পানির সহায়তায় দেশীয় প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি ফেরি নির্মিত হচ্ছে। দরপত্রে অংশগ্রহণ করে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যোগ্যতা অর্জন করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে ফেরিগুলো তৈরি করা হচ্ছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, নতুন ২০টি ফেরি কেনার উদ্যোগ নিলেও এর আগে পুরাতন আরো ৫১টির মতো ফেরি রয়েছে। সেগুলো দেশের বিভিন্ন রুটে চলছে। ওই পুরাতন ফেরিগুলো কয়েক ক্যাটাগরির। এর মধ্যে রো রো ফেরি, স্মলফেরি, ইউটিলিটি ফেরিসহ কয়েক ধরনের ফেরি রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close