দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও এর জের ধরে বজ্রপাতে ভারতে এক দিনে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কেবল বিহার রাজ্যেই মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। এ ছাড়া ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও উড়িশাতেও ঘটেছে বজ্রপাতে প্রাণহানি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে জানায়, আগের দিন রবিবার বজ্রপাতে মৃত্যুর এই ঘটনা ঘটে। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছে রাজ্য সরকার।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শুধু বিহারে এদিন বজ্রপাত এবং বজ্রঝড়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যটির পৃথক আটটি জেলায় প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ভাগলপুর জেলা থেকে ছয়জন, বৈশালী থেকে তিনজন, বাঁকা ও খাগরিয়া থেকে যথাক্রমে দুজন এবং মুঙ্গের, মাধেপুরা, কাটিহার এবং সহরসা থেকে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে বজ্রপাত এবং বজ্রঝড়ে এত মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার শোক প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে নিহতদের জন্য তাদের নিকটাত্মীয়কে চার লাখ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা) করে আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। অন্য দিকে ভারতের আরেক রাজ্য ছত্তিশগড়ের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বজ্রপাতে ৫২টি ছাগলও মারা গেছে রাজ্যটিতে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ২২ বছর বয়সি চিন্তামণি ধনকড় নামে একজন রাখাল তার ছাগলের পালসহ ছত্তিশগড়ের গড়িয়াবন্দ জেলার সহসপুর গ্রামের কাছে বজ্রপাতে মারা যান। তিনি ছাগল নিয়ে একটি বড় গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ৫২টি ছাগলসহ চিন্তামণি ধনকড় ঘটনাস্থলেই নিহত হন বলে নিশ্চিত করেছেন গড়িয়াবন্দ জেলার পুলিশ সুপার জে আর ঠাকুর।

বজ্রপাতে প্রাণ হারানো বাকি দুজনের একজন নারী ও একজন যুবক। সংবাদমাধ্যম বলছে, বৃষ্টির মধ্যে জমিতে ধান রোপণের সময় ৪০ বছর বয়সি এক নারী এবং ২৩ বছর বয়সি এক ব্যক্তি খেত থেকে আগাছা অপসারণের সময় বজ্রপাতের কারণে মারা যান। তারা যথাক্রমে ছত্তিশগড়ের বালোদাবাজার-ভাটাপাড়া ও মুঙ্গেলি জেলার বাসিন্দা।

ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল বজ্রপাতে নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন এবং প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে রেভিনিউ বুক সার্কুলার (আরবিসি) বিধানের অধীনে চার লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

এদিকে বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় রবিবার ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহরাষ্ট্রের নাগপুর এবং পালঘরে চারজন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন অল্পবয়সি শিশুও রয়েছে। সংবাদমাধ্যম বলছে, রবিবার মহারাষ্ট্র রাজ্যের পালঘর জেলায় বজ্রপাতে দুই বছরের এক ছেলে শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘটনার সময় ওই শিশু ও তার বোন বাড়ির বাইরে খেলছিল। অন্য দিকে রাজ্যে দুটি কৃষকের কুঁড়েঘরে বজ্রপাত হলে দুজন নিহত হন। তারা হলেন- দীনেশ কাম্বলে (৩২) এবং বাবারাও ইঙ্গলে (৬০)। এ ছাড়া তৃতীয় ঘটনায় ২৩ বছর বয়সি যোগেশ পাটিল নামে এক ব্যক্তি নাগপুর জেলার হিওয়ারমাথ গ্রামের খামারে বজ্রপাতে মারা যান।

এদিকে গুজরাটে ভারী বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতের কারণে এক নাবালকসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরো একজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। রবিবার রাজ্যে মতি জগধর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। সংবাদমাধ্যম বলছে, রবিবার গুজরাটের ভাবনগর জেলায় বজ্রপাতে ভুপতি মাভজি এবং তার ১০ বছর বয়সি ভাতিজা রবি মারা যায়। তারা একই পরিবারের সদস্য। এ সময় একজন আহত হন।

গুজরাটের মহুয়া থানার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বজ্রপাতের ঘটনায় গুরুতর আহত এক নারীকে চিকিৎসার জন্য মহুয়ার একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।’

এদিকে রবিবার বজ্রপাতে উড়িশার নুয়াপাড়া জেলার ভুবনেশ্বরে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরো দুজন আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। বার্তাসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, নুয়াপাড়ার মল্লিকামুন্ডা গ্রামে একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ করছিলেন ছয়জন। একপর্যায়ে সেখানে বজ্রপাত হয়। তাদের সবাইকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চারজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

"