নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২১ জুন, ২০২২

সংক্রমণের চতুর্থ ঢেউ

দেশে আবার বাড়তে শুরু করেছে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। ১০০ দিনেরও বেশি সময় পর আবার শনাক্ত ছাড়িয়েছে ৮০০। এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৩২ জনে। এর আগে ৩০ মে একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সংক্রমণের এ ঊর্ধ্বমুখী ধারাকে কোভিডের চতুর্থ ঢেউয়ের শুরু বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সংক্রমণ বাড়ার পেছনে ভূমিকা রাখছে নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট এমনটাও মত তাদের। সেক্ষেত্রে সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও টিকা নেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৪৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ৮ হাজার ২৮টি নমুনা। এতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৭৩ জনের। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৮৯৯ জন।

গত শনিবার শনাক্তের সংখ্যা ছিল ৩০৪ জনে। এর আগের এক সপ্তাহের হিসাব অনুযায়ী, গত শনিবার শনাক্ত হয় ৭১ জন, রবিবার ১০৯ জন, সোমবার ১২৮ জন, মঙ্গলবার ১৬২ জন, বুধবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩২ জনে, বৃহস্পতিবার ৩৫৭ জন, শুক্রবার ৪৩৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের সাংহাই, উত্তর কোরিয়া এবং ভারতে যে ভ্যারিয়েন্ট রয়েছে, সেই অমিক্রনের একটি উপ-ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সরকারি সংস্থা আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন একে দেখছেন একটি নতুন ঢেউ হিসেবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশেও সেই নতুন করে একটা সংক্রমণের ঢেউয়ে প্রবেশ করল। তবে এটা এখনো গুচ্ছ সংক্রমণ পর্যায়ে আছে। তিনি আশঙ্কা করছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই সংক্রমণ আরো অনেক বাড়বে। মনে হচ্ছে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটা উপ-ভ্যারিয়েন্ট বিএ৪ বিএ৫ দ্বারা হচ্ছে। তবে এই সংক্রমণের ফলে অতিরিক্ত ভয়ের কারণ নেই। যে উপ-ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে সেটি অমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের গতির তুলনায় বেশি গতিসম্পন্ন। কারণ অতি দ্রুত এটা অনেক মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে।

এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সরকারের জাতীয় কারিগরি কমিটির প্রধান মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, অতি অল্প সময়ে সংক্রমণের হার ৬ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের। নতুনভাবে সাবধানতা অবলম্বনের এখনই সময়।

মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, তিনটি জিনিস যদি আমরা অবলম্বন করি তাহলে এক রকম ফল পাব। আর তিনটি জিনিস অবলম্বন না করলে আরেক রকম ফল পাব। একটি হলো আবারও স্বাস্থ্যবিধি মানা, যারা করোনা টিকা নিয়েছে তাদের বুস্টার নেওয়া, আর যারা বুস্টার নিয়েছে তাদের সতর্ক থাকা।

আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘রিপোর্টগুলো প্রকাশ্যে আসছে না। পরোক্ষভাবে কিছু তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে উচিত হবে এপিডোমিওলজিক্যাল অ্যানালাইসিস করা। অর্থাৎ রোগতাত্ত্বিক একটা বিশ্লেষণ করা। কারা আক্রান্ত হচ্ছেন, কোন এলাকার বাসিন্দা, তাদের টিকা নেওয়া আছে কি নেই, নেওয়া থাকলে এক ডোজ নাকি পূর্ণ ডোজ, কোন টিকা নিয়েছেন, ভ্যারিয়েন্ট কী, এটা স্থানীয়ভাবে বাড়ছে নাকি ভারত থেকে আসছে- এ ধরনের বিশ্লেষণ যদি করত তাহলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কী নিলে ভালো হবে তা বোঝা যেত।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বা আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, কোনো নতুন ভ্যারিয়েন্ট এলো কিনা সেটা বোঝার ব্যাপার আছে। সেটার সংক্রমণ কেমন হবে সেটা বোঝার ব্যাপার আছে।

তার মতে, বাংলাদেশে যেহেতু টিকাদান কর্মসূচি ভালো হয়েছে তাই কিছুটা আশান্বিত হওয়া যায়। তবে সংক্রমণ যদি অনেক বেশি বাড়তে থাকে, অনেক বয়স্ক মানুষ যদি আক্রান্ত হতে থাকে, তখন সেটার প্রভাব কী হতে পারে সেটা অনিশ্চিত। এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই একমাত্র করণীয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close