দিলরুবা খাতুন, মেহেরপুর

  ২০ জুন, ২০২২

মেহেরপুরের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু নিয়ে মেহেরপুরবাসী আছেন তুমুল উচ্ছ্বাসে। এটি কৃষিনির্ভর একটি জেলা। স্থানীয়রা মনে করছেন, পদ্মা সেতুর কল্যাণে মেহেরপুর হবে দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত জেলা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে এখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

মেহেরপুরের মানুষ আশা করছে, মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়, প্রস্তাবিত মুজিবনগর স্থলবন্দর বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যেও সামাজিক, অর্থনৈতিক সম্পর্কের উন্নয়ন হবে। এই অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক ও জীবনযাত্রার মানের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। পদ্মা সেতু ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নযাত্রাকে বেগবান করবে।

মেহেরপুর কৃষিনির্ভর একটি জেলা। এ পর্যন্ত জেলায় কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। অসম্পূর্ণ যোগাযোগব্যবস্থাও পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। প্রাচীনকালে শুধু নদীপথ ও কাঁচা সড়কপথে মেহেরপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা স্টেশন সংযুক্ত হয়। দেশবিভাগের পর মেহেরপুর সবদিক থেকেই সংকুচিত হয়ে পড়ে। জেলার মানুষের বিকল্প কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকাতে আদিম অর্থনৈতিক কর্ম হিসেবে কৃষিই একমাত্র পেশা।

ঊর্বর মাটি ও অনুকূল জলবায়ু সবসময় অর্থনৈতিক কর্ম হিসেবে কৃষিই একমাত্র পেশা। ঊর্বর মাটি ও অনুকূল জলবায়ু সবসময় সহায়তা করছে। কৃষিশস্য, মৎস্য, সবজি এবং গবাদিপশু পালনের ক্ষেত্রে মেহেরপুরের মানুষ সবসময় এগিয়ে। এই অগ্রসরতার কারণে জেলার কৃষির সঙ্গে জড়িত কৃষকের ওপর নেমে এসেছে বিভিন্ন প্রকার নির্যাতন নিপীড়ন। বর্গিদের আগমন ও শস্য লুট, সুলতানদের অতিরিক্তি শস্যকর এবং শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের নীলচাষের বেদনাদায়ক ইতিহাস সেই কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়। পদ্ধতিগত দিক থেকে মেহেরপুরের উৎপাদিত ফসল জাতীয় খাদ্যভান্ডারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ১৯৩৮ সালে ফ্লাড কমিশনের রিপোর্টে জানা যায়, এই অঞ্চলের ২৯ শতাংশ লোকই ভূমিহীন এবং ৪ শতাংশ লোকের জমি আছে এক একরের কম। গড় হিসেবে শতকরা ২৫ ভাগ লোক ১ বিঘা পরিমাণ জমির মালিক। এই অঞ্চলের বিত্তবানদের প্রচুর পরিমাণ জমি থাকলেও তার যথাযথ ব্যবহার ছিল না। আবার অধিক লোকের কম পরিমাণ জমি থাকলেও যথাযথ কৃষিজ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে কৃষককুলে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের উপস্থিতি প্রাচীনকাল থেকেই প্রকট। মধ্যবিত্তের কৃষির ধরনই ভরণপোষণযোগ্য। এককথায় খেয়ে-পরে বাঁচা ছিল গত আশির দশক পর্যন্ত। সত্তরের দশকে আলু, গম আবাদের মাধ্যমে ভূমিতে সেচকাজ শুরু হয়। আধুনিক ফসলের ব্যাপক প্রসারের ফলে বর্তমানে জমিতে সারা বছরই আবাদ হচ্ছে। ফলে ঋতুনির্ভরতা ফসলের আবাদ নেই বললেই চলে। শস্যের ধরন, মাটির বৈশিষ্ট্য, সহনশীলতা, জলবায়ু, পানির প্রাপ্যতা ও আনুষঙ্গিক বৈশিষ্ট্যের কারণে মেহেরপুরে চাষাবাদে এখন বিপ্লব এসেছে। কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থার কারণে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পান না। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক ও জীবনযাত্রার মানের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।

মেহেরপুরের সমাজকর্মী মাহবুব মন্টু পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে বলেছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার আন্তযোগাযোগ বেড়ে যাবে। যা কৃষিতে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হবে। বর্তমান সরকার কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। প্রশিক্ষণের ফলে কৃষিতে ফসল উৎপাদন বেড়ে গেছে বহুগুণ। কৃষকের জন্য সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করায় কৃষিতে নতুন নতুন ফসল উৎপাদন হচ্ছে। কৃষিতে উদ্যোক্তা তৈরি করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় ঋণগ্রহীতাদের ব্যাংকের আওতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তবে তা ইতিবাচক প্রভাব রাখবে অবশ্যই।

পদ্মা সেতু চালু হলে মেহেরপুরের কৃষিতে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হবে বলে বলেন সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভিন। তিনি বলেন, মেহেরপুরের মাটিতে সোনা ফলে। এখানকার মাটিতে সব ধরনের ফসল উৎপাাদন হয় এবং স্বাদে অনন্য। মেহেরপুরে উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চিটাগাং, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হয়। এখানকার সবজিসহ আমণ্ডলিচুর সমাদর দেশের বাইরে ইউরোপ মহাদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। মেহেরপুরের আম সুস্বাদু। হিমসাগর আমের তুলনা হয় না। ফেরি পারাপারে যানজট থাকায় বেশির ভাগ সময়ই পথেই সবজি পচে নষ্ট হয়ে যায়। পদ্মা সেতু চালুর ফলে ফেরিতে চাপ কমবে। যানজট থাকবে না। ফলে সবজিসহ কৃষকের উৎপাদিত পণ্য কম সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছবে। এতে কৃষক ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন। পদ্মা সেতুতে সড়কপথের পাশাপাশি মেহেরপুরে রেলের সংযোগ যত দ্রুত চালু হবে, কৃষিতে তত উন্নয়নের গতিময়তায় নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস পরিলক্ষিত হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close