প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ জুন, ২০২২

দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১৭ জেলায় বন্যার আশঙ্কা

ভারতের মেঘালয় ও আসামে ক্রমাগত বৃষ্টি হওয়ায় তা বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এরই মধ্যে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যা কবলিত হয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, আগামী দুদিনের মধ্যে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের আরো ১৭ জেলা বন্যা কবলিত হতে পারে। কারণ, সেসব এলাকায় বন্যার তীব্রতা বাড়ছে, নদীগুলোর পানি আরো বাড়তে শুরু করেছে। সারা দেশের ১০৯টি নদী পর্যবেক্ষণ করছে এই দপ্তর। তারা বলেছে, এরমধ্যে ৯৫টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলছেন, ‘এসব এলাকার বন্যার পানি আরো বাড়তে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। সেই সঙ্গে যমুনা নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে উত্তরাঞ্চলের আরো কিছু জেলা প্লাবিত হতে পারে। বন্যার এই পানি আবার নেমে গেলে মধ্যাঞ্চলের কিছু জেলাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

যেসব জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা : বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় তা আমাদের দেশে এগিয়ে আসছে। ফলে জামালপুর, বগুড়া, শেরপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পাবনায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বন্যার পানি আরো নিচের দিকে নেমে এলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ইত্যাদি এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে আরো ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। গত তিন দিনে এখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আসামে বৃষ্টি হতে পারে অন্তত ৩০০ মিলিমিটার। এসব এলাকার বৃষ্টির পানি সিলেট ও কুড়িগ্রাম দিয়ে নেমে আসবে। মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আশা দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা।

সিলেট, কানাইঘাট, সুনামগঞ্জ ও দিরাইয়ে সুরমা নদী, কুড়িগ্রামে ধরলা, চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র, লরেরগড়ে জাদুকাটা, কলমাকান্দায় সোমেশ্বরী নদীর পানি, নাকুয়াগাঁওয়ে ভোগাই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর পানিও বাড়ছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ, ভারতের আসাম, মেঘালয়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এসব পানি বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম এলাকা থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সাগরে নামে। ফলে এসব এলাকার নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে মধ্যাঞ্চলেও : বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ১২২ বছরে এটি রেকর্ড। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির সেই বৃষ্টির পানি দ্রুতগতিতে সুনামগঞ্জ এবং সিলেট অঞ্চলে নেমে এসেছে। সেজন্য বন্যা অল্প সময়ে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।

তিনি জানিয়েছেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দেশের উত্তরে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এবং নীলফামারীসহ কয়েকটি জেলায়ও আগামী কয়েক দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এ ছাড়া উত্তরের জেলাগুলোর পানি নামার সময় সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইলসহ মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোয়ও বন্যা হতে পারে।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া মনে করেন, এ বছর বর্ষা মৌসুমের আগেই এপ্রিল-মে মাসে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে নদীগুলোতে বিপৎসীমার কাছে পানি ছিল। এখন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় অল্প সময়েই সিলেট অঞ্চলসহ বিভিন্ন জায়গা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়েছে।

যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। জেলার কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় আরো ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এরই মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলেও বন্যার তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। আগামী দুদিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের ১৪ জেলায়ও বন্যা হতে পারে। পদ্মা নদীর পানি বেড়ে একই সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলের চারটি জেলায় বন্যা শুরু হতে পারে। দেশের তিন এলাকার ওই বন্যা আরো ৭ থেকে ১০ দিন ধরে থাকতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আগামী দুদিনের মধ্যে দেশের উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভারী বৃষ্টি আরো বাড়তে পারে। অন্যদিকে পদ্মার মূল নদী গঙ্গার উজানে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তা আরো বাড়তে পারে। ফলে শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর ও ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা শুরু হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, তিস্তার পানিও এরই মধ্যে বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এবার দেশে মাঝারি বন্যা হতে পারে। ৭ থেকে ১০ দিন দেশের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ এলাকা বন্যায় ডুবে থাকতে পারে।

এ ছাড়া তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ উত্তরের নদণ্ডনদীর পানি বাড়ায় লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, রৌমারী ও রাজিবপুর ছাড়াও কুড়িগ্রামের আরো তিন উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলার ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় মাচা বা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।

তিস্তা ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাঘটসহ ১৬ নদণ্ডনদীর পানি বাড়ছে। ফলে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের অন্তত ১০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close