ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৮ মে, ২০২২

মুমিনুলদের লজ্জার হার

ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় শ্রীলঙ্কার কাছে ঢাকা টেস্টে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা পেল মুমিনুলরা। এই ম্যাচ হেরে শ্রীলঙ্কার কাছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে হারল টাইগাররা। চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট ড্র করলেও ঢাকা টেস্টে শ্রীলঙ্কার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার শ্রীলঙ্কার কাছে ১০ উইকেটে হারল টাইগাররা।

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার সিরিজটি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। এ পর্যন্ত ৬ ম্যাচে ৩ জয়, ২ হার, ১ ড্রতে ৪০ পয়েন্ট ও শতকরা ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ জয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানে শ্রীলঙ্কা।

আর ৮ ম্যাচে ১ জয়, ৬ হার, ১ ড্রতে ১৬ পয়েন্ট ও শতকরা ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ জয়ে টেবিলের অষ্টম স্থানে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পর টেবিলের নবম ও শেষ দল ইংল্যান্ড। টেবিলের শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। ৮ ম্যাচে ৫ জয়, ৩ ড্রতে ৭২ পয়েন্ট ও শতকরা ৭৫ শতাংশ জয়ে টেবিলে সবার ওপরে অসিরা।

মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষেই হারের শঙ্কায় পড়েছিল বাংলাদেশ। কারণ প্রথম ইনিংসে ১৪১ রানে পিছিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ দিন শেষে টাইগারদের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ৩৪ রান।

২৩ রানে ৪ উইকেট পতনের পর হাল ধরেছিলেন মুশফিকুর রহিমণ্ডলিটন দাস। দিন শেষে মুশফিক ১৪ ও লিটন ১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তাই হার এড়ানোর জন্য ভরসার নাম ছিল মুশফিক-লিটন। কারণ প্রথম ইনিংসে ২৪ রানে ৫ উইকেট পতনের পর জুটি বেঁধে ২৭২ রানের জুটি গড়েছিলেন মুশফিক-লিটন।

পঞ্চম ও শেষ দিনের পঞ্চম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর পঞ্চম স্পর্শ করে। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান লিটন। রাজিথার বলে লিটনকে ক্যাচ আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। পরে রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান ৯ রানে থাকা লিটন।

তবে দিনের অষ্টম ওভারে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রাজিথার বলে বোল্ড হন মুশফিক। অফস্টাম্পের বাইরের বল ভেতরের দিকে ঢুকলে ব্যাট দিয়ে সেটি রুখতে পারেননি মুশি। তাতে স্টাম্প ভাঙে মুশফিকের। ৩৯ বলে ৪টি চারে ২৩ রান করেন মুশফিক। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ১৭৫ রান এসেছিল তার ব্যাট থেকে।

দলীয় ৫৩ রানে মুশফিক ফিরলে ক্রিজে আসেন সাকিব আল হাসান। শুরুতেই মারমুখী হয়ে উঠেন তিনি। রাজিথার ২৫তম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি মারেন সাকিব। লিটনও দুটি বাউন্ডারি তুলে নিলে, ৩০তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর তিন অঙ্কে পৌঁছায়।

এরপর সাকিব-লিটন জুটি পঞ্চাশ রান পূর্ণ করে। পাশাপাশি বাংলাদেশের অষ্টম ব্যাটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ২ হাজার রান ক্লাবে প্রবেশ করেন লিটন। আর মধ্যাহ্ন-বিরতির আগ মুহূর্তে লিড নেয় বাংলাদেশ। আর প্রথম সেশনের শেষ বলে ফ্লিক করে চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। ৬১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন সাকিব। প্রথম সেশনের বিরতির আগে সাকিব দ্রুত অর্ধশতক করলেও হাফ সেঞ্চুরি থেকে ২ রান দূরে ছিলেন লিটন। আর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৪৯ রান।

বিরতির থেকে ফেরার পর প্রথম ওভারেই হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ লিটন। ১৩তম টেস্ট অর্ধশতকের জন্য ১৩০ বল খেলেন লিটন। তবে পরের ওভরেই লিটনের বিদায় ঘণ্টা বাজান আসিথা।

আসিথার অফ-স্টাম্প ও মিডল স্টাম্পের ডেলিভারি সোজা ড্রাইভ করতে গিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে দেন লিটন। অনেকটাই নিচের দিকে ভাসছিল বলটি। বল ডেলিভারি দেওয়ার পর ডান-দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাত দুর্দান্ত ক্যাচে লিটনকে বিদায় দেন আসিথা। ৩টি চারে ১৩৫ বলে ৫২ রান করেন লিটন। প্রথম ইনিংসে ১৪১ রান করেছিলেন তিনি। ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব-লিটন ১৬৪ বলে ১০৩ রান যোগ করেন।

লিটনকে হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার আগেই সাকিবের বিদায় দেখে বাংলাদেশ। আসিথার বাউন্সার পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাকিব। গ্লাভসে লেগে শ্রীলঙ্কার উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকবেলার হাতে জমা পড়ে। ৭টি চারে ৭২ বলে ৫৮ রান করেন সাকিব। ফলে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে ১৬৩ রানে সাকিবকে হারায় বাংলাদেশ।

এরপর ৬ রানে শেষ ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে শূন্য করা, মোসাদ্দেক এবার ১টি চারে ৯ রান করেন। শিকার হন স্পিনার রমেশ মেন্ডিস। তাইজুল ইসলামকে ১ রানে শিকার করে ইনিংসে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন শ্রীলঙ্কার আসিথা। ৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট নিলেন তিনি।

আর বাংলাদেশের শেষ ব্যাটার খালেদ আহমেদকে শূন্য হাতে বিদায় দিয়ে ইনিংসে নিজের ষষ্ঠ উইকেট নেন আসিথা। ৫৬তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাইজুল ও তৃতীয় বলে খালেদকে শিকার করেন আসিথা। এতে ১৬৯ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে জয়ের জন্য মাত্র ২৯ রানের টার্গেট পায় শ্রীলঙ্কা। লঙ্কানদের পক্ষে আসিথা ৫১ রানে ৬টি, রাজিথা ৪০ রানে ২টি ও রমেশ ১টি উইকেট নেন।

২৯ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নেমে ৩ ওভারেই জয় তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা । তাইজুলের করা প্রথম ওভারেই ১৬ রান তুলেন শ্রীলঙ্কার ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দো। ওই ওভারে ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন ওশাদা।

সাকিবের করা দ্বিতীয় ওভারে ৭ রান পায় শ্রীলঙ্কা। আর এবাদতের তৃতীয় ওভার থেকে ৬ রান নিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় লঙ্কানরা। ওশাদা অপরাজিত ২১ ও অধিনায়ক দিমুথ করুনারতেœ অপরাজিত ৭ রান করেন।

প্রথম ইনিংসে ৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন লংকার আসিথা। আর সিরিজ সেরা হন শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। দুটি সেঞ্চুরিতে সিরিজে ৩৪৪ রান করেন ম্যাথুজ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close