গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৪ মে, ২০২২

সুষ্ঠু ভোটের জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে ইসি

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনে নির্বাচনী ব্যবস্থায় সংস্কারের পক্ষে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব সেগুলোও নিতে প্রস্তুত রয়েছে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ইসির সংলাপে উভয়ের মতামতের খসড়া নথি পর্যালোচনায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে কমিশনের প্রধান অংশীজন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে পাওয়া প্রস্তাবগুলোর পর্যালোচনার পর।

শিগগিরই সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি। তাই বেশকিছু বিষয়ে সুশীল অংশীজনদের সঙ্গে মতামতকে অগ্রাধিকার দিলেও স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনৈতিক দলসহ অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি।

সংলাপে নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভোটের সময় ভোটকেন্দ্রে ভোট কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য অনুমোদিত সাংবাদিকদের এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অবাধ সুযোগ প্রদান নিশ্চিতে সচেষ্ট থাকবে ইসি। স্বচ্ছতার জন্য ভোটকেন্দ্রে গোপন ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) প্রতিস্থাপন করে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরভাগের দৃশ্য বাহির থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করার বিষয়টি কমিশন সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে।

ইসি সূত্রমতে, এর আগে কোনো কমিশন সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়ে কোনো চিন্তা করেনি; প্রাথমিক প্রস্তাবনায় রাখা ইসির এ সিদ্ধান্ত নির্বাচনে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ক্ষেত্রে ইতিবাচক বলেও মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

আর নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্য রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করে একটি পক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকে। কিন্তু বিগত কোনো কমিশন তাদের একটা জবাবদিহিতার জায়গায় নিতে ন্যূনতম উদ্যোগ নেওয়ার চিন্তা করেনি। কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার আগে নির্বাচনে নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে ভাবছে- এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচনে কারো পক্ষে পক্ষপাতিত্বে যাতে জড়িয়ে না পড়েন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা- সেজন্য তাদের নিরপেক্ষ অবস্থান ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা থাকবে ইসির।

নির্বাচনে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী কমিশন। সেখানে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও সজাগ দৃষ্টি রেখে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, মতৈক্য ও সমঝোতা এহেন সমস্যা নিরসনে প্রভূত ভূমিকা রাখতে পারে। আর ভোটকেন্দ্রে ও ভোটাধিকার প্রয়োগে অর্থশক্তি ও পেশিশক্তির প্রভাব প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কমিশন।

নির্বাচনে আলোচিত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে এরই মধ্যে সংলাপে অংশ নেওয়া অংশীজনরা চরম বিরোধিতা করলেও এ বিষয়ে কৌশলী অবস্থানে রয়েছে বর্তমান কমিশন। তাদের প্রস্তাবনায় দেখা গেছে, ইভিএমের শুদ্ধতা ও অপপ্রয়োগ রোধ নিশ্চিত করতে কমিশন এরই মধ্যে কয়েকটি সভা করেছে। পরীক্ষা ও পর্যালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিমিত্তে আগামীতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে আরো পর্যালোচনা সভা আয়োজন করা হবে। অতঃপর কমিশন আগামী জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বা ব্যবহারের পরিধি ও বিস্তৃতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০০ সংসদীয় আসনে ইভিএমে নির্বাচন করার বিষয়ে ইসিকে উদ্যোগ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। পরে এ নিয়ে তুমুল শোরগোল শুরু হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আগে ইভিএমে নির্বাচন করবে কি করবে না এ বিষয়ে ইসি কিছুটা নমনীয় থাকলেও ওই ঘোষণার পর কৌশলী পথে এগোচ্ছে কমিশন।

এদিকে, সংলাপে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক ও বরেণ্য শিক্ষাবিদরা গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন আয়োজনে বেশকিছু পরামর্শ ও মতামত দিয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নির্বাচন কমিশনকে গৃহীত শপথের প্রতি অনুগত থেকে সৎ, নিরপেক্ষ ও সাহসী হয়ে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সদস্যকে ভোটের সময় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনে এসব সদস্য সংখ্যা অপ্রতুল হলে নির্বাচন একাধিক দিনে কয়েকটি ভাটে অনুষ্ঠান করা যেতে পারে। সংসদ নির্বাচনে বেশির ভাগ আসনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটানিং কর্মকর্তা নিয়োগ করে নির্বাচন পরিচালনার সুপারিশ জানান।

ইসি সূত্রমতে, আগামী জুন মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি। এ সংলাপ ঈদুল আজহা পরবর্তী গড়াতে পারে। কারণ ইসির প্রধান এই অংশীজনদের মতামতকে অধিক গুরুত্ব দিতে চায়। তাদের সঙ্গে সংলাপের পর আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে কমিশন। বর্তমান কমিশন আরপিওসহ নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলোকে অধিক প্রাধান্য দিচ্ছে বলে ইসির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close