নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৩ মে, ২০২২

অর্থনীতি সমিতির গবেষণা

দেশে কালোটাকা ৮৮ লাখ কোটি

স্বাধীনতার পর ৪৬ বছরে দেশে কালো টাকার পরিমাণ প্রায় ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। এ সময় দেশ থেকে কমপক্ষে আট লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই টাকা উদ্ধার করে তা দেশের জাতীয় বাজেটে খরচ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। গতকাল রবিবার রাজধানীর মগবাজারে অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৩-২৩ : একটি জনগণতান্ত্রিক বাজেট প্রস্তাব’ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

সংগঠনটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২০ লাখ ৫০ হাজার ২৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছে। যেটি চলতি অর্থবছরের সরকারি বাজেটের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ গুণ বড়।

আমাদের বাজেট সম্প্রসারণশীল মন্তব্য করে ড. আবুল বারকাত বলেন, টাকাণ্ডপয়সাকে মূল লক্ষ্যবস্তু ধরে নিয়ে সরকারের বাজেট শুরু হয়। সমাজ নির্মাণে এ পদ্ধতির শুরুটাই ভ্রান্ত। কারণ, টাকাপয়সা কখনো মূল লক্ষ্য হতে পারে না, তা লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম হতে পারে মাত্র। আমরা বাজেট ব্যালেন্সের পক্ষে নই। আমরা অর্থনীতি ব্যালেন্সেরও পক্ষে নই। আমরা সোশ্যাল ব্যালেন্সের পক্ষে।

বাজেট প্রস্তাবনায় ৩৩৮টি সুপারিশ করা হয়। ড. আবুল বারকাত বলেন, বৈষম্য-অসমতাণ্ডদারিদ্র্য দূর করতে শুধু আসন্ন বাজেটে নয়, আগামী অন্তত পাঁচ বছর সমাজ থেকে আয়, সম্পদ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবৈষম্য ক্রমাগত কমিয়ে এক সময় নির্মূল করার লক্ষ্যে যেতে হবে।

বাজেটে আয়-ব্যয়ের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন হতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাজেটে অর্থায়নের উৎস নির্ধারণে দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, বিত্তহীন, প্রান্তিক, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর কোনো ধরনের করদাসত্ব আরোপ করা যাবে না।

আবুল বারকাত বলেন, করোনা অতিমারির আগে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় আসার যোগ্য ছিল ২ কোটি মানুষ। যাদের ৭৫ শতাংশ এ সুবিধা পেত না। এই সংখ্যা কোভিডকালে বেড়ে কমপক্ষে সাড়ে ৩ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। অনানুষ্ঠানিক খাত নিঃস্ব হয়েছে। কয়েক কোটি মানুষ বেকার হয়েছে। অবস্থা একই রকম থাকলে সামাজিক সুরক্ষা প্রাপ্তিযোগ্য মানুষের দ্বিগুণ বাড়বে এবং বেড়েছে। এসব বিবেচনায় আমাদের প্রস্তাবিত জনগণতান্ত্রিক বাজেটে এটি হলো সর্বোচ্চ বরাদ্দ প্রাপ্তিযোগ্য খাত। এই খাতে সরকারি যা বরাদ্দ করে থাকে, তা যৌক্তিক নয়। যে কারণে আমরা নতুন আটটি খাত অন্তর্ভুক্ত করেছি।

অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, বার্ষিক প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি ৫ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে। সরকার যে মূল্যস্ফীতির কথা বলে, সেটি প্রকৃত মূল্যস্ফীতির তুলনায় অনেক কম। শর্ত হচ্ছে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। মূল্যস্ফীতি এমন কোনো পর্যায়ে নেওয়া যাবে না, যা অর্থনীতিকে মূল্যস্ফীতির ঘূর্ণনচক্রের মধ্যে ফেলবে। এছাড়া খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোনো অবস্থায়ই বাড়ানো যাবে না।

উল্লেখ্য, আসন্ন অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছে। এতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ৯ জুন জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close