নরসিংদী ও বেলাব প্রতিনিধি

  ২৩ মে, ২০২২

নরসিংদীর বেলাব

চাচাতো ভাইকে ফাঁসাতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে খুন

রংমিস্ত্রি গিয়াস উদ্দিন শেখ তার স্ত্রী রাহিমা বেগম ও দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন। নরসিংদীর বেলাবতে এক বাড়ির দুইটি মাটির ঘর থেকে রাহিমা বেগম ও দুই শিশু সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শনিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মিস্ত্রি গিয়াস উদ্দিন শেখ পুলিশকে জানিয়েছেন তিনি তার চাচাতো ভাইকে ফাঁসাতে গিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

গতকাল রবিবার উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামে এক বাড়ি থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন নিহত রাহিমা বেগমের স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ। নিহত তিনজন হলেন বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের রংমিস্ত্রি গিয়াস উদ্দিন শেখের স্ত্রী রাহিমা বেগম এবং তাদের দুই সন্তান রাব্বি শেখ (১৩) ও রাকিবা শেখ (৭)। রাহিমা বেগম এলাকায় একজন দর্জি হিসেবে পরিচিত। এছাড়া রাব্বি করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে নারায়ণগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় সিফারা শ্রেণিতে পড়াশোনা করলেও পরে আর মাদ্রাসায় যায়নি। অন্যদিকে রাকিবা স্থানীয় বাবলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ঘটনাটি লোকমুখে ছড়িয়ে

পড়লে স্থানীয় ও আশপাশের এলাকার শতশত নারী-পুরুষ ওই বাড়িটিতে জড়ো হন। মা ও দুই সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

এদিকে এই ঘটনায় দুপুর ২টার দিকে দুই সন্তানের পিতা গিয়াস উদ্দিন শেখকে আটক করেছে পিবিআই। প্রাথমিকভাবে এই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন নরসিংদীর পিবিআই পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান। এই ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরি ও ব্যাট উদ্ধার করা হয়েছে।

জানা যায়, গিয়াস উদ্দিন শেখ কাজের সুবাদে বেশিরভাগ সময় গাজীপুরে অবস্থান করলেও দুই সন্তানকে নিয়ে রাহিমা বেগম এই বাড়িটির দুইটি মাটির ঘরে বসবাস করতেন। গত শনিবার বিকালে তিনি কাজের সূত্রে গাজীপুরের কর্মস্থলে যান। আজ সকালে বাড়িটির দুইটি মাটির ঘরে তাদের তিনজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আজ সকাল ১০টার দিকে গাজীপুর থেকে তিনি বাড়িতে আসেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রবিবার সকাল ৮টার দিকে বিলকিস বেগম নামের এক নারী বানাতে দেওয়া কাপড় আনতে যান রাহিমা বেগমের বাড়িতে। বাইরে থেকে দরজা আটকানো দেখে বেশ কয়েকবার নাম ধরে সজোরে ডাকাডাকি করেন তিনি। কিন্তু আশপাশ থেকেও কারো কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কৌতূহলবশত দরজার নিচ দিয়ে ঘরের ভেতরে তাকান তিনি। এ সময় তিনি ঘরের ভেতর রক্ত দেখে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ও প্রতিবেশীরা এসে জড়ো হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ওই দুই ঘরের ভেতর তিনজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন তারা। এরপরই বেলাব থানা-পুলিশকে খবর জানানো হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। বেলা ১১টার দিকে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান ঘটনাস্থলে এলে দুই ঘরের দরজা খুলে নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ঘটনাস্থলে ডিবি, র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআই ও পুলিশ সদস্যরা যার দায়িত্ব পালন করছেন। পিবিআই বলছে, আটকের পর গিয়াস উদ্দিন শেখ আমাদের কাছে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি জানান, শনিবার রাতে গোপনে বাড়িতে আসেন। পরে স্ত্রী রাহিমা বেগমের কক্ষে ঢুকে একটি ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তাকে উপর্যুপরি পেটান। পরে তার পায়ে ধরে টেনে মেঝেতে ফেলে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেন তিনি। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর পাশের ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত দুই সন্তানের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ওই ব্যাট দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে হত্যা করেন তিনি। পরে দুই ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকে রেখে তিনি পালিয়ে যান।

পিবিআই আরো জানায়, কী কারণে কারা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, সে বিষয়ে যার যার মত তদন্ত করছিল ডিবি, র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআই ও পুলিশ কর্মকর্তারা। গিয়াস উদ্দিন শেখও তাদের তদন্তে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছিলেন। কিন্তু তাকে খুবই নির্বিকার লাগছিল। দিব্যি স্বাভাবিক ছিলেন। তাকে প্রথমে কোনো সন্দেহও হয়নি আমাদের। তিনি আমাদের জানান, ঘটনার সময় তিনি গাজীপুরে ছিলেন। পরে তদন্তের স্বার্থে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বার ট্র্যাক করে আমরা জানতে পারি, হত্যাকান্ডের সময় তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন। এরপরই সন্দেহ থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর জেরার মুখে তিনি আমাদের কাছে মৌখিকভাবে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।

আটকের আগে গিয়াস উদ্দিন শেখের অভিযোগ ছিল, ১০-১২ দিন আগে বাড়িতে কয়েকটি গাছ কেটেছিলেন তিনি। এ নিয়ে তখন তার এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ওই চাচাতো ভাই তাদের গাছগুলো বিক্রি করতে দেননি। এ নিয়ে তর্কবিতর্ক বাড়লে তিনি হত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন। তবে আটকের পরে পিবিআইয়ের কাছে তার ভাষ্য, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইকে ফাঁসাতে গিয়ে তিনি এই কান্ড ঘটিয়েছেন।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নরসিংদীর পুলিশ সুপার এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, হত্যাকান্ডের সময় গাজীপুরে ছিলেন জানালেও আমরা তার মোবাইল ট্র্যাক করে জানতে পারি তিনি ওই সময় ঘটনাস্থলেই ছিলেন। এছাড়া একজন নারীর সঙ্গে তার মুঠোফোনে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার বিষয়টিও আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এই দুই কারণে আমরা তাকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করি। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আমাদের কাছে মৌখিকভাবে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এরপরই তাকে আটক করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close