প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৩ মে, ২০২২

ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের সভায় প্রধানমন্ত্রী

পরিবেশ রক্ষায় যত্রতত্র অবকাঠামো নয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রকৃতিগত পার্থক্যের উল্লেখ করে অঞ্চলভিত্তিক যথাযথ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পরিবেশ রক্ষায় যত্রতত্র অবকাঠামো করা যাবে না। ডেল্টাপ্ল্যানের মাধ্যমেই পরিবেশ রক্ষা করতে হবে। সমুদ্রের বিশাল জলরাশিকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজে লাগাতে হবে। গতকাল রবিবার ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলের সভায় বক্তব্য দেন তিনি। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে গড়ে উঠছে বড় বড় অবকাঠামো। শিল্পায়নে আসছে নতুন মাত্রা।

পানির গতিপথ কোনো অবস্থাতেই বন্ধ করা যাবে না। দেশ নিয়ে কাজ করতে হলে আগে দেশটাকে ভালোভাবে চিনতে হবে, জানতে হবে। ‘ডেল্টাপ্ল্যান’ বাস্তবায়নের কাজও শুরু হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডেল্টাপ্ল্যানটা যদি ভালোভাবে একটা গাইডলাইন তৈরি করে ভালোভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, আর যেহেতু এটা ২১০০ সাল পর্যন্ত, তাই সময়ের সঙ্গে এটা পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন করতে হবে। সেভাবেই আমাদের প্ল্যান হাতে নিতে হবে।’

মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা কাজ করব। পরিকল্পনা বাস্তবায়নটা কীভাবে আমরা করতে পারি সেটা ত্বরান্বিত হবে এবং বাস্তবমুখী পদক্ষেপ কীভাবে নেব সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। সেভাবে আমাদের এগোতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন জাপান সফরে গিয়েছিলেন, তখন তিনি যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে জাপান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেন, তারপর জাপান একটি সম্ভাব্য যাচাইয়ের জন্য একটি দল পাঠায়। সম্ভাব্য যাচাই সমীক্ষা ১৯৭৪ সালে শুরু হয়েছিল।

সরকার প্রধান বলেন, ‘যে সম্ভাব্য প্রতিবেদনে সেতু প্রকল্প সাইটের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী পদ্মা নদীর গভীরতার পার্থক্য পাওয়ায় তিনি সেতুর নকশা নতুন করে প্রণয়ন করান। নতুনভাবে আমি নকশা করিয়েছি। আমি এখানে কোনো গোঁজামিল করতে দিইনি। যদিও এটি সময় নিয়েছে, তার পরও নকশা পাল্টে যেখানে যতটুকু ওজন নিতে পারবে সেভাবেই নকশা করেই এটা করা।’

জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের কোনো দায় নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোর কারণে জলবায়ু পরিবর্তন ঘটলেও এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের ওপর। ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা প্রয়োজনে সময়ে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা যেতে পারে।’

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, প্রধান সমন্বয়ক (এসডিজিবিষয়ক) জুয়েনা আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বৈঠকে ছিলেন।

শত বছরের পরিকল্পনা বাংলাদেশ ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারপারসন করে এই কাউন্সিল গঠন করে সরকার। ১২ সদস্যের এই কাউন্সিল গঠন করে গত বছরের ১ জুলাই গেজেট প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

বন্যা, নদীভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যানিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে বহু আলোচিত ‘বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। ‘ডেল্টাপ্ল্যান’ নামে বেশি পরিচিত এ মহাপরিকল্পনার অধীনে আপাতত ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প নেবে সরকার, যাতে ব্যয় হবে প্রায় ২৯৭৮ বিলিয়ন টাকা। ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিলে কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রীকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এই কাউন্সিলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রীকেও সদস্য করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close