সিলেট প্রতিনিধি

  ২২ মে, ২০২২

নামছে পানি দুর্ভোগ আরো সপ্তাহখানেক

অকালবন্যায় পানির নিচে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। তলিয়ে গেছে হাটবাজার। ঘরে খাবার নেই। নেই বিশুদ্ধ পানি। বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সিলেটের ১৫ লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে সিলেটের নদণ্ডনদীতে পানি কমতে শুরু করেছে। এই দুর্ভোগ কাটিয়ে উঠতে আরো সপ্তাহখানেক সময় লাগতে পারে।

তবে তা নির্ভর করছে ভারতের বরাক নদীর ওপর। কারণ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল সুরমা ও কুশিয়ারা নদী হয়ে সিলেট অঞ্চলে প্রবেশ করছে। এই দুই নদীর কিছু কিছু পয়েন্টে পানি কমলেও তা এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বরাক থেকে আসা পাহাড়ি ঢল না কমলে সিলেটে বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পানি নামবে না। তাই অকাল বন্যায় পানিবন্দি সিলেটের ১৩ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের চোখ এখন ভারতের বরাক নদীর দিকে। প্রতিনিয়ত বরাক নদীর খোঁজখবর রাখছেন বন্যাদুর্গতরা।

এদিকে সিলেটে সুরমা নদীর কিছু পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বাড়ছে কুশিয়ারার পানি। ফলে সিলেট নগরীর সুরমা নদীর আশপাশের এলাকার পানি কিছুটা কমলেও কুশিয়ারার ঢলে নতুন করে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া সুরমা-কুশিয়ারার উৎসমুখে ভাঙনের কারণে জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের অবস্থা এখনো ভয়াবহ। স্থানীয়রা সুরমা-কুশিয়ারার উৎসমুখের বাঁধ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। এই ভাঙন রোধ করা গেলে দুই উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা বন্যার ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার এ দুটি পয়েন্টে পানি প্রবাহ যথাক্রমে ১১ সেন্টিমিটার ও ৭ সেন্টিমিটার কমেছে। এছাড়া, শনিবার একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর আমলসীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫৬ সেন্টিমিটার, শেওলায় ৫৫ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার আমলসীদে ১১ সেন্টিমিটার ও শেওলায় ৩ সেন্টিমিটার পানির প্রবাহ কম ছিল। তবে, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি শুক্রবারের চেয়ে শনিবার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এদিকে নগরে পানি কিছুটা কমলেও কমেনি বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি উপদ্রুত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত রোগ। বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এমন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ এড়াতে নগর ছাড়তে শুরু করেছেন অনেকে। শুক্র ও শনিবার নগরের প্লাবিত এলাকার অনেক বাসিন্দাকে নগর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে দেখা যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর (পুর) দপ্তরের সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে সিলেটে আর বন্যার পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় আরো পাঁচ দিন পানিবন্দি থাকতে হবে সিলেটবাসীকে। বন্যায় যেখানে যেখানে বাঁধ ভেঙেছে সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে আবার নতুন করে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সিলেটে যে নদী ও খালগুলো আছে, সেগুলো ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ড্রেজিং করার লক্ষ্যে আমরা এখানকার নদীগুলো নিয়ে স্টাডি করছি। সিলেটের সুরমা নদীর গতিপথ ঠিক থাকলেও এর ড্রেজিং করতে হবে। এ লক্ষ্যে নতুন একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এখনো প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন হয়নি, তবে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলছে। সুরমা নদীর ড্রেজিং হয়ে গেলে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি কমে যাবে বলে জানান তিনি।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি এখনো নামেনি। সরকার বন্যার্তদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।’

৩৩২ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে : টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেটে ১২১টি সড়কের ৩৩২ কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়াও ভেঙে গেছে ২টি কালভার্ট। সড়ক ও জনপথ (সওজ) ও এলজিইডির আওতাধীন এ সড়কগুলো এখনো পানির নিচে। তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।

এলজিইডি সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইনামুল কবীর জানান, বন্যায় ১১১টি রাস্তার ২৬৭ কিলোমিটার অংশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলা ও কোম্পানীগঞ্জে দুটি কালভার্ট ভেঙেছে। যেহেতু রাস্তার উপরে এখনো পানি, তাই ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিলেটের আন্তঃজেলা ১০টি প্রধান সড়কের ৬৫ কিলোমিটার অংশ প্লাবিত হয়েছে, এর মধ্যে ৫টি সড়কে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ আছে। জকিগঞ্জে বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় দুটি সড়কে পানি দ্রুত বাড়ছে।

সুরমা-কুশিয়ারার উৎসমুখে ভাঙনরোধে কাজ করছেন স্থানীয়রা : ভারতের নদী বরাক থেকে প্রবল বেগে আসা পাহাড়ি ঢলে জকিগঞ্জের আমলশীদ নামক স্থানে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর উৎসমুখে ভয়াবহ ভাঙন রোধে কাজ করছেন স্থানীয়রা। শনিবার সকাল থেকে স্থানীয় লোকজন বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বারঠাকুরি ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন মর্তুজা চৌধুরী টিপু।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close