গাজী শাহনেওয়াজ

  ২০ মে, ২০২২

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ঠেকাতে কঠোর নির্দেশনা

প্রাণসংহারি করোনার পর ফের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। তবে হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত একজন রোহিঙ্গা যাতে ভোটার তালিকায় নাম ওঠাতে না পারেন, সেজন্য বিশেষ সতর্কতা ও নজরদারি করার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার জন্য আমরা সব ধরনের নির্দেশনা দিয়েছি। বলেছি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকের সঠিক তথ্য নিয়ে তালিকা হালনাগাদ করার জন্য। তবে রাজধানীতে কিছুটা সমস্যা হয়, কারণ দারোয়ানরা বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেন। তবে গ্রামে এই সমস্যা নেই। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও আমরা বলেছি একটি নির্ভুল তালিকা করার জন্য। কারণ একটি ভোটার সনদ দিয়ে নাগরিক সেবা নিয়ে থাকেন ৩৯টি। তাই নিবন্ধন কর্মকর্তা এবং যিনি ভোটার হবেন, উভয়ের সহায়তা জরুরি।’

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, একজন রোহিঙ্গা যাতে ভোটার হতে না পারেন, সেজন্য কঠোর নজরদারি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারো পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে বিশেষ এলাকায় কাউকে ভোটার করা যাবে না। শনাক্তকারী ব্যক্তির নামণ্ডপরিচয়ও নিশ্চিত করতে হবে।

নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘২০ মে ভোটার হালনাগাদ শুরু হলেও ওইদিন কমিশন নিজেরাই বসবে। রোহিঙ্গারা যাতে কোনো অবস্থায় ভোটার পরিচয়পত্র না পায়, সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে সভায় সুপারিশ জানানো হবে।’

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিষয়ে চারটি ওয়ার্কশপ হয়েছে। সেখান থেকে যে ফিডব্যাক এসেছে, সে অনুযায়ী কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরো কিছু নির্দেশনা দেওয়া হবে।’

ইসি সূত্রমতে, করোনা মহামারির আগে হালনাগাদ করার সময় অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করা হয়। এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেখানে ইসির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা রয়েছে- এমন অভিযোগ উঠেছিল। পরে বিশেষ তদন্তে ছাড় পেয়েছিল ওই কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, সম্প্রতি ইসির সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত এ-সংক্রান্ত ১৩টি শর্ত যুক্ত করে সব সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় ভোটার করার ক্ষেত্রে শর্তগুলো হলো- রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের স্বপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য দেন এবং মিথ্যা কাগজপত্র সরবরাহ করেন এবং তা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়; তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা করা হবে। বিশেষ এলাকাসমূহে ভোটারদের ভোটার এলাকা স্থানান্তর কার্যক্রম সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে।

বিশেষ এলাকার জন্য অতিরিক্ত বিশেষ তথ্য ফরম আবশ্যিকভাবে পূরণ করে দাখিল করতে হবে; রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় তথ্য সংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজাররা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান/সাধারণ মেম্বার/সংরক্ষিত মেম্বার/চৌকিদারের সহায়তায় তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং রোহিঙ্গারা যাতে কোনোমতেই ভোটার হিসেবে বিশেষ এলাকাসমূহে বা দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে নিবন্ধিত না হতে পারেন, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকাসমূহের ক্ষেত্রে নিবন্ধনের জন্য ফরমে উল্লিখিত যাবতীয় তথ্যাদি এবং তথ্যাদির স্বপক্ষে প্রমাণক হিসেবে দাখিলকৃত ডকুমেন্টস ‘বিশেষ কমিটি’কে বিশেষ এলাকার জন্য প্রযোজ্য প্রতিটি বিশেষ ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাইপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দেশের চার জেলা- চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের ৩২টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করেছে ইসি। আর এসব এলাকায় ভোটার করার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে বিশেষ কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ এলাকার মধ্যে কক্সবাজার জেলার ৮টি, বান্দরবানের ৭টি, রাঙামাটির ৮ এবং চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা রয়েছে।

উপজেলাগুলো হলো- কক্সবাজারের সদর উপজেলা, চকোরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, বোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি। রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা।

২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা কার্যক্রম হাতে নেয় ইসি। সেসময় ৯ কোটি ভোটারের ডেটাবেইজ তৈরি করা হয়। ইসির সর্বশেষ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটার রয়েছে। এরমধ্যে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন পুরুষ, ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন নারী ভোটার এবং ৪৫৪ জন হিজড়া ভোটার রয়েছে।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকার ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নাগরিক সনদ (রঙিন ছবিযুক্ত), তার পিতাণ্ডমাতা/স্বামী/স্ত্রী এনআইডি, পিতাণ্ডমাতার নাগরিক সনদ, নিকাহনামা (বিবাহিত হলে), পাসপোর্ট (যদি থাকে); পাবলিক পরীক্ষার সনদ এবং অনলাইন জন্ম/মৃত্যু সনদের ভেরিভাইড কপি যাচাইপূর্বক গ্রহণযোগ্য হবে;

স্থানীয় মেয়র/চেয়ারম্যান কর্তৃক সম্প্রতি প্রদত্ত জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের মূলকপি, স্মারক নং ও তারিখ সম্বলিত প্রত্যয়নপত্র, রঙিন ছবিযুক্ত ও ছবির ওপর কর্তৃপক্ষের সিলমোহর সম্বলিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে; রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য ফরমের পাশাপাশি ভোটারযোগ্য নাগরিকদের অনলাইনে নিবন্ধন ফরম (ফরম-২) পূরণ এবং পূরণকৃত ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে দাখিল করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close