সিলেট প্রতিনিধি

  ১৯ মে, ২০২২

সিলেটে বন্যার আরো অবনতি

বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। জেলার সবকটি উপজেলায় প্রবেশ করেছে বানের পানি। গতকাল বুধবারও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ব্যাহত হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। সিলেট নগরীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জকিগঞ্জ উপজেলার নিচু এলাকার মানুষ। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

এদিকে গতকাল সিলেট নগরীর আরো নতুন কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সিলেট ফায়ার সার্ভিস অফিস, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, উপমহাপুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়, কোতোয়ালি থানা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, তোপখানা সড়ক ও জনপথের কার্যালয়, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, বিদ্যুতের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। সিলেট নগরীর সাতটি ওয়ার্ডে ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে সিটি করপোরেশন।

এদিকে সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বৃষ্টিও কমছে না। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দুপুর ১২টায় পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা কানাইঘাট (সিলেট) পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে, তবে এখনো তা বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমা সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সুনমাগঞ্জ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ (সিলেট) পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে এখন বিপদসীমার ১৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে শেওলা (সিলেট) পয়েন্টে নদীটির পানি বেড়েছে ৮ সেন্টিমিটার, এখন তা বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের কিছু স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, সিলেটে ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এছাড়া ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের জন্য দ্বিতীয় দফায় ১০০ টন চাল এবং তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, সিলেট নগরীর উপশহরসহ কয়েকটি এলাকার বিদ্যুতের সাবস্টেশন পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকায় মঙ্গলবার থেকে বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, সদর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির।

সিলেট জেলায় বন্যার্তদের জন্য ২৭৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রায় ১৫০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। সঙ্গে শুকনো খাবারও বিতরণ করা হচ্ছে। সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।

অপরদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, এই মৌসুমে সিলেটে সবসময়ই ঢল নামে। কিন্তু সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি আটকে আছে। এই পানি বেশি দিন থাকবে না। দ্রুতই নেমে যাবে। ফলে কয়েকটা দিন কষ্ট করতে হবে। এই দুঃসময়ে সরকার বন্যার্তদের পাশে আছে। বুধবার দুপুরে সিলেট নগরের চালিবন্দর এলাকার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের ছাতক উপ?জেলার ১৩?টি ইউ?নিয়ন ১?টি পৌরসভা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে বহু কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে হাজারো ঘরবাড়ি, দুই শতা?ধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শতা?ধিক মৎস্য খামার। সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানি বাড়ছে। ৫ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা চৈলা নদী, পিয়াইন নদী স্টেশন ২৬৮, সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি। ছাতক শহর, ছাতক সদর, কালারুকা, চরমহল্লা, জাউয়াবাজার, দোলারবাজার, ভাতগাঁও, উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা, সিংচাপইড়, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫ লক্ষা?ধিক মানুষ পা?নিব?ন্দি হ?য়ে প?ড়ে?ছেন।

পানি বাড়ছে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিমাপক ওমর আলী জানান ২৪ ঘণ্টায় ৬০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। জেলার যমুনা তীরবর্তী কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহাজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চর এলাকার কৃষকরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন। পাকা ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে, তবে তিল, কাউন, বাদামসহ শাকসবজি তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন চাষিরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close