জিয়াউদ্দিন রাজু

  ১৬ মে, ২০২২

বিরোধীদের নির্বাচনে আনতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনতে নানা পরিকল্পনা কষছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঠের রাজনীতিতে বিরোধী দল নির্বিঘেœ সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারবে এমন ইঙ্গিতও দেন তিনি। তবে বর্তমানে নির্বাচনকালীন সরকারের যে আইন রয়েছে তা কোনোভাবেই পরিবর্তন হবে না। সংবিধানে থাকা নির্বাচনী বিধি-রীতি মেনেই বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে নির্বাচনে আনার বার্তা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, যেকোনো কৌশলে হোক বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার টার্গেট আওয়ামী লীগের। তাই বিএনপিকে রাজপথে কর্মসূচি পালনে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হবে না। অহেতুক গ্রেপ্তারি বা মামলাও দেওয়া হবে না। কারণ বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে কি না তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বড় ইস্যু হবে। গত নির্বাচনের শেষ সময়ে গণভবনে ‘সংলাপ’ আয়োজনের মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসা হয়েছিল। এবারও নতুন কোনো কৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করা হবে। এ বিষয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে সরকারি দল আন্তরিক, এমন বিশ্বাস সব মহলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন নেতারা। দেশে-বিদেশে কোনো মহল থেকে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে যেন প্রশ্ন না ওঠে সেদিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিগত বিরোধী জোট নির্বাচনে অংশ না নিলে এর দায় যেন সরকারের ওপর না এসে পড়ে সেজন্য আগে থেকেই চেষ্টা করা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে, একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন চাইলে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও বার্তা দেওয়া হয় ওই বৈঠক থেকে।

বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো নির্বাচনের আনার বিষেয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক। আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক, তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুক। কিন্তু বিএনপিকে নির্বাচন ভীতিতে পেয়ে বসেছে। আসলে নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা কথাটি এক্ষেত্রে বিএনপির জন্য প্রযোজ্য। আশা করব বিএনপি নির্বাচন ভীতি কাটিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।’ তবে বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে আসবে না। কিন্তু দলটিকে যেভাবেই হোক নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য এরই মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতার। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমন্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের এক যৌথসভায় হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচকালীন নিরপেক্ষ সরকারের যে দাবি বিএনপি করে আসছে, সেটি ‘রাজনৈতিক দরকষাকষি’। বিএনপিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে। বিএনপিকে বলব, দরকষাকষি করে লাভ নেই। সরকার সংবিধানের নির্বাচন সংক্রান্ত আইন থেকে নড়বে না।

সম্প্রতি গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপিসহ বিরোধীকে নির্বাচনে আনার বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। আগামী নির্বাচন যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় সেই চেষ্টাও করবে তারা। বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন করেই আওয়ামী লীগ জয়ী হবে। জনগণ আওয়ামী লীগকেই আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘বিশেষ কোনো দলকে বিশেষ কৌশলে নির্বাচনের আনার বিষয় নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকারপ্রধানের ইচ্ছা রয়েছে। নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসুক আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সেটাই চায়। নির্বাচন কমিশন সে ব্যবস্থা করবে। কমিশন চাইলে সরকারপ্রধান সব সাহায্য-সহযোগিতা করবেন। তবে এর সবই হবে সংবিধানের আলোকে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে কোন দল আসবে বা আসবে না এর জন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক আওয়ামী লীগ তা চায়। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহির ভেতরে আসা উচিত, এটা সরকারের ও আওয়ামী লীগের দায়বদ্ধতা আছে। আমাদের পরিষ্কার চিন্তা-ভাবনা। যদি কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে বিরাজনৈতিকীকরণ করতে চায়, অপরাজনীতি করতে চায়, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যারা করে তাদের নির্বাচনের পথে থাকা উচিত। সংবিধানে নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে, এর বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকার এর বাইরে যাবে না। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ চেষ্টা করছে ১৪ দলীয় জোটকে আরো সম্প্রসারিত করার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলগুলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনী জোটে আনার চেষ্টা চলছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close