নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ মে, ২০২২

বাজেট ২০২২-২৩

এবার বড় বরাদ্দ মেগা প্রকল্পে

পদ্মা সেতুসহ সরকারের তিন মেগা প্রকল্প চালু হতে যাচ্ছে এ বছর। ফলে শেষ দিকে থাকা প্রকল্পগুলো যেন অর্থ সংকটে না পড়ে, আবার গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্পেও যেন ঠিকমতো কাজ হয়, সেজন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সেগুলো প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে অনুমোদনের জন্য উঠছে নতুন এডিপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। নতুন এডিপিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবহন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও গৃহায়ন খাত। এদিকে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টায় এবং মহামারি পরবর্তী পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়া রোধ করতে সরকার আগামী অর্থবছরের জন্য ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকার ভর্তুকি প্যাকেজ প্রস্তুত করেছে। যা আগের অর্থবছরের ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার ভর্তুকির চেয়ে ২১ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়া হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা, যা এই খাতে আগামী অর্থবছরের মূল বাজেটের দ্বিগুণ এবং সংশোধিত বাজেট থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। সারেও পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। এই খাতে ভর্তুকি দিতে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে এর পরিমাণ ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি।

ভর্তুকি বাড়ানো প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে গত মার্চে তেলের দাম ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে এবং সার ও প্রাকৃতিক গ্যাস রেকর্ড দামে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তুকির জন্য বরাদ্দ বাড়ানো ছাড়া সরকারের আর কোনো উপায় নেই। কারণ, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এমনিতেই কমে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসেইন মনে করেন, তেল, সার, গ্যাস ও বিদ্যুতের উচ্চমূল্য এবং মূল্যস্ফীতির প্রভাব পুরোপুরি কমানোর জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। এর অর্থ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামের ক্ষেত্রে কিছু সমন্বয় হবে এবং বিপিডিবি (বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড) ও বিইআরসি (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) দাম বৃদ্ধির জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। তেল, গ্যাস ও সারের দাম সহজে কমবে না তবে এগুলোর দাম আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও খুব বেশি নেই।

তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, মেগা প্রকল্পগুলো চালু হলে দেশের অর্থনীতি অনেক এগিয়ে যাবে। এর মধ্যে কয়েকটি তো শেষের দিকে রয়েছে। তাই সেগুলোতে বরাদ্দের চাপও কমছে, তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাবে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। অগ্রাধিকার পাওয়া বড় প্রকল্পগুলো হলো পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, কর্ণফুলী টানেল বা বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, মেগা প্রকল্পগুলোর সিংগভাগই যোগাযোগ খাতের। তাই এ খাত এডিপিতে বড় বরাদ্দই পাচ্ছে। মোট এডিপির প্রায় ২৯ শতাংশই যাবে এ খাতে।

কোন প্রকল্প কেমন বরাদ্দ : পদ্মার ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের মূল সেতুসহ ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দক্ষিণের অর্থনীতিতে সুদিন আনবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গত অর্থবছর প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধনীতে বরাদ্দ কমিয়ে করা হয় ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। জুনে এ সেতু উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

মেট্রোরেল : আগামী ডিসেম্বরে চালু হওয়ার কথা রয়েছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। প্রথমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং পরে কমলাপুর পর্যন্ত যাবে এ রেল। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল-৬) আগামী অর্থবছরে ২ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও আরএডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল।

পদ্মা রেল সেতু : ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পটি। দেশের দক্ষিণ অংশকে রাজধানী ঢাকা ও অপর অংশের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত করবে এ রেললাইন। আগামী অর্থবছর এতে বরাদ্দ থাকছে ৫ হাজার ৮০০ কেটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু টানেল : কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের টিউব স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রামের দুই অংশকে এক করা এ টানেল আগামী অক্টোবরে উদ্বোধনের কথা রয়েছে। আগামী অর্থবছরে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এ প্রকল্প।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র : ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ের মাতারবাড়ীর বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও গভীর সমুদ্র বন্দরের অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। চলতি বছর বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৩০০ কেটি টাকা।

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র : রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকার। টাকার অঙ্কে এটি দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। আগামী এডিপিতে সবচেয়ে বড় বরাদ্দ ১৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা পাচ্ছে এ প্রকল্প। এ প্রকল্পে সর্বশেষ বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা।

দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার রেল : ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আপাতত কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত রুট নির্মাণ হচ্ছে না। প্রকল্পের মেয়াদ আরো বাড়তে পারে। নতুন এডিপিতে এটি বরাদ্দ পাচ্ছে ১২০ কোটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু রেলসেতু : দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ। বঙ্গবন্ধু সেতুর (সড়ক) ৩০০ মিটার উজানে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ডুয়েল গেজ, ডাবল ট্র্যাকের সেতুটি নির্মাণে আগামী বছর বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর : শুরুতে পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলেও তা থেকে সরে এসেছে সরকার। এখন সেখানে শুধু সমুদ্রবন্দর হবে। সেখানে দুটি প্রকল্প চলমান। ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুবিধাদির উন্নয়ন প্রকল্প। আবার পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা নির্মাণ প্রকল্প ৪ হাজার ৫১৬ কোটি টাকার। আগামী অর্থবছর বরাদ্দ থাকছে যাথাক্রমে ৫১৩ কোটি টাকা ও ২৮৬ কোটি টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close