গোপালগঞ্জ ও কাশিয়ানী প্রতিনিধি

  ১৫ মে, ২০২২

দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল তিন দম্পতির

ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বেরিয়েছিলেন এক দম্পতি। কাজ শেষে নববিবাহিত এক দম্পতি মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। আরেক দম্পতি ব্যস্ত ছিলেন সড়কের পাশে ধানমাড়াইয়ে। হঠাৎ এক দুর্ঘটনা একসঙ্গে কেড়ে নিল তাদের সবার প্রাণ।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মিল্টন বাজার এলাকায় যাত্রীবাহী বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তাদের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত ব্যক্তিগত গাড়ির চালকও মারা গেছেন। এ নিয়ে নিহত মানুষের সংখ্যা হয়েছে আট।

মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। তাদের মধ্যে ২০ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন রয়েছেন। তারা হলেন ঢাকা বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক ও গোপালগঞ্জ শহরের বটতলা এলাকার প্রফুল্ল কুমার সাহার ছেলে বাসুদেব কুমার সাহা (৫২), তার স্ত্রী শিবানী সাহা (৪৮) ও ছেলে আহ্?ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্বপ্নিল সাহা (১৯)। চিকিৎসক বাসুদেব সাহার ব্যক্তিগত গাড়ির চালক আজিজুল ইসলামও (৪৪) নিহত হয়েছেন।

নিহত বাকি চারজন হলেন কাশিয়ানি উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নের দক্ষিণ ফুকরা গ্রামের পিয়ার আলী মোল্লার ছেলে ফিরোজ মোল্লা (৪৮), তার স্ত্রী একই গ্রামের বাদশা শেখের মেয়ে রুমা বেগম (২৮), একই গ্রামের জিন্দার আলী ফকিরের ছেলে অনীক বাবু (২৮) ও অনীকের নববিবাহিতা স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার (১৯)। ফিরোজ ও রুমা সড়কে ধানমাড়াইয়ের কাজ করছিলেন। অনীক ও ইয়াসমিন মোটরসাইকেলে কাশিয়ানি থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন।

ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবু নাঈম মোহাম্মদ মুফাজ্জেল হক বলেন, রাজিব পরিবহনের একটি বাস মাওয়া থেকে খুলনার দিকে যাচ্ছিল। এ সময় কাশিয়ানি উপজেলার মিল্টন বাজার এলাকায় খুলনা থেকে ঢাকাগামী একটি প্রাইভেট কার মোটরসাইকেলের সঙ্গে বাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুমড়েমুচড়ে ব্যক্তিগত গাড়িটি সড়কের পাশে ধানমাড়াইরত মেশিনের ওপর গিয়ে ছিটকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের তিনজন, ধানমাড়াইরত স্বামী-স্ত্রীসহ সাতজন নিহত হন। এরপর হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে আরো একজন মারা যান।

ইনচার্জ আরো জানান, দুর্ঘটনাস্থলে সড়কের পাশে বোরো ধান মাড়াই করছিলেন স্থানীয়রা। তাদের মধ্যে চারজনই মারা যান। এ ঘটনায় আহত হন আরো অন্তত ৩০ জন। খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয় লোকজন হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও কাশিয়ানি ১০০ শয্যার হাসপাতালে নিয়ে যান।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, কাশিয়ানী মুকসুদপুর সদর সার্কেল শাহিন চৌধুরী, কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান, থানার ওসি মো. মাসুদ রায়হানসহ জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, দুঃখ ও বেদনাদায়ক এই সড়ক দুর্ঘটনা। জেনেছি ঘটনাস্থলে সাতজন নিহত হয়েছে এবং হাসপাতালে একজন। ২৫ জনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষকে যথাযথ চিকিৎসাসেবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী প্রতিনিধি জানান, প্রাইভেট কার খাদে পড়ে দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন একজন। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে আলদী-দীঘিরপাড় সড়কের পুরান বাজার এলাকায় রাস্তার ওপর নির্মাণাধীন ভাঙা ব্রিজের গোড়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হলেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর চরমসূরার মানিক মিয়ার ছেলে জিসান (১৯) ও তার বন্ধু একই গ্রামের সর্গতুল্লাহর ছেলে ফাহিম (১৭)। গুরুতর আহত হয়েছে একই গ্রামের জাহিদ হাসান (১৬)। সে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, গভীর রাতে লাল রঙের প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে ৪০ ফুট নিচে খাদে পড়ে যায়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জিসান ও ফাহিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

টঙ্গিবাড়ী থানার ওসি মোল্লা সোহেব আলী বলেন, উপজেলার পুরাস্থ নির্মাণাধীন ব্রিজের নিচে রাস্তার পাশের খাদ থেকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি থেকে তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। আহত একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close