নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৩ মে, ২০২২

ডেসটিনি ২০০০

বিনিয়োগ ১৯৩৫ কোটি আছে ৫০ লাখ টাকা

পণ্য বিক্রিতে সাফল্য পাচ্ছিল না ডেসটিনি ২০০০ নামের কোম্পানিটি। ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে ২০০৫ সালে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (ডিএমসিএসএল) নামে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি গঠন করেন ২২ জন।

কাল্পনিক লাভের আশা দেখিয়ে ১ হাজার ৯০০ কোটির বেশি টাকা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ডিএমসিএসএল। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ডিএমসিএসএলের সঙ্গে চুক্তি করে ডেসটিনি ২০০০। পরে ডিএমসিএসএলের অর্থ ডেসটিনির বিভিন্ন কোম্পানিতে ঋণ আকারে স্থানান্তর করা হয়। এভাবে আত্মসাৎ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ডিএমসিএসএলের ব্যাংক হিসাবে আছে বিনিয়োগকারীদের মাত্র ৫০ লাখ টাকা।

ডিএমসিএসএলের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এভাবেই বিনিয়োগকারীদের অর্থ সরিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন অন্যতম আসামি আকবর হোসেন। তিনি ডিএমসিএসএলের কোষাধ্যক্ষ। ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, পণ্য বিক্রয় ব্যবসায় সফলতা না পেয়ে তারা কমিশনের ভিত্তিতে এমএলএম পদ্ধতি প্রয়োগ করে অর্থ সংগ্রহ করেন।

মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম। রায়ে অভিযোগপত্রভুক্ত ৪৬ আসামির সবার বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড হয়েছে।

২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৪ মে মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্ম পরিদপ্তর থেকে নিবন্ধন পায় ডেসটিনি। কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক রফিকুলসহ ১২ জন। সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ ২০০০ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ডেসটিনির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২০০৫ সাল পর্যন্ত পণ্য বিক্রির মাধ্যমে ব্যবসায় সফল হয়নি ডেসটিনি ২০০০। একপর্যায়ে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তখন উদ্যোক্তা পরিচালকরা কমিশনের ভিত্তিতে লাভবান হওয়ার জন্য এমএলএম পদ্ধতি প্রয়োগের পরিকল্পনা করেন। তার ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে সমবায় অধিদপ্তর থেকে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামে নিবন্ধন নেয়। তবে সমবায় সমিতি আইন ও বিধিমালাসহ সোসাইটির আইনে কমিশনের ভিত্তিতে এমএলএম পদ্ধতিতে মূলধন বা আমানত সংগ্রহের বিধান নেই।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, অস্বাভাবিক লাভের আশা দেখিয়ে, সাড়ে আট লাখ মানুষকে প্রতারিত করে ১ হাজার ৯৩৫ কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বিধিবহির্ভূতভাবে সংগ্রহ করে ডিএমসিএসএল। সংগ্রহ করা অর্থের একটা বড় অংশ অলাভজনক, নামসর্বস্ব, অবকাঠামোহীন কোম্পানিতে বিনিয়োগ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগে সমবায় সমিতি আইন লঙ্ঘন হয়েছে। এখন ডিএমসিএসএলের ব্যাংক হিসাবে মাত্র ৫০ লাখ টাকা আছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, রফিকুল আমিনের আমেরিকার মরগান চেইজ ব্যাংক, সিঙ্গাপুরের ডিবিএস ব্যাংক, মালয়েশিয়ার এইচএসবিসি ব্যাংক, কানাডার নোভাকোশিয়া ব্যাংক, মন্ট্রিয়েল ব্যাংক, টরন্টোর ডমিনিয়ান ব্যাংক, লরেনশিয়ান ব্যাংক ও সিঙ্গাপুরের ওসিবিসি ব্যাংকে হিসাব খোলা আছে। তিনি ৪১ কোটি ১৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮৫৫ টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।

হারুন-অর-রশীদ সম্পর্কে অভিযোগপত্রে বলা হয়, ডিএমসিএসএলের অর্থ স্থানান্তর-রূপান্তর করে আত্মসাতের ঘটনায় তিনি জড়িত বলে রফিকুল ও মোহাম্মদ হোসেন স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেন।

রায়ের পর হারুন-অর-রশীদের আইনজীবী মঈনুল ইসলাম বলেন, আমার মক্কেল ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির কোনো সদস্য ছিলেন না। সোসাইটির সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তার অংশগ্রহণ ছিল না। বিচারিক আদালতের রায়ে হারুন-অর-রশীদ ন্যায়বিচার পাননি। তাই তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close