খুলনায় প্রতি কেজি বাদাম তেল এখন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। নানা পুষ্টিতে ভরপুর বাদাম তেল। বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে এ তেলে। এক সময়ে এ তেল রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে রূপচর্চা ও ঔষধি হিসেবে এর বেশ কদর রয়েছে। তবে বাদামের সরবরাহ কম থাকায় তেলের দাম বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুলনা মহানগরীর বড় বাজারের দুটি দোকানে বিক্রি হয় এই বাদাম তেল। বড় বাজারের বাইনে পট্টির ব্যবসায়ী বাবলু সাহা বলেন, ‘এক সময়ে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হতো বাদামের তেল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের সরবরাহ বাড়লে মানুষ এ দুটির দিকে ঝুঁকতে থাকে। ধীরে ধীরে গৌরব হারাতে থাকে বাদাম তেল। ত?বে এটি দেখতে সয়াবিন তেলের মতো স্বচ্ছ, ঘ্রাণও ভালো।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাজারে বাদামের দাম বেশি হওয়ায় এর চাহিদাও কমে গেছে। বর্তমানে এটি রূপচর্চা ও ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে সরকার বাদাম চাষের উদ্যোগ নিলে এবং ফলন ভালো হলে এ তেলের দাম কমতে পা?রে।’

অপর ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য তেলের তুলনায় বাদাম তেলের দাম বেশি। কবিরাজি চিকিৎসায় এ ব্যাপক কদর আছে। দৌলতপুর মুহসিন কলেজ এলাকার মিল থেকে এ তেল সংগ্রহ করেন। প্রতি মাসে দোকান থেকে ১০ কেজি তেল বিক্রি হয়।

বরদিয়া বাদাম তেল মিল মালিক অরবিন্দ দাশ বলেন, এ তেলের চাহিদা এক সময়ে ছিল। কালের বিবর্তনে এর কদর হারিয়ে গেছে। য?দিও একেবারে হারিয়ে যায়নি। রূপচর্চার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার রয়েছে। তবে বাদাম তেলের ব্যবহার বাড়াতে হলে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এর আবাদ বাড়াতে হবে। বর্তমানে বাদামের দাম বেশি। ফলন বেশি হলে এর দাম কমে যাবে। দাম কম হলে মানুষ ব্যবহার করবে।

খুলনা ওমেন্স কলেজের ফুড অ্যান্ড নিউট্রেশন ডিপার্টমেন্টের প্রধান ড. নাসরিন নাহার বেগম বলেন, বাদাম তেলে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ভিটামিন ই প্রচুর পরিমাণে থাকে। এ কারণে শরীরে ফ্যাট কোলেস্টেরল জমতে পারে না। বাদাম তেল এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যেটা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। এর অপর গুণাগুণ হলো স্কিনকে হাইড্রেট থেকে রক্ষা করে ও মশ্চারাইজড করে। বাদাম তেল শরীরের জন্য উপকারী অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। এজন্য এটাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাদাম তেল পিগমেন্টেশন রোধ করে। এ তেলে প্রচুর মিনারেলস আছে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম খনিজ পদার্থ রয়েছে। যা শরীরকে ইলেকট্রলাইটিস ব্যালান্স থেকে রক্ষা করে। তিনি বাদাম তেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

পুষ্টিবিদদের মতে, বাদামের তেল সুস্বাদু, মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ। এর রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। বাদামে যে পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে তা অন্যান্য খাদ্য উপাদান থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি। বাদামের তেল দেখতে সয়াবিনের মতোই স্বচ্ছ। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে দেশে রান্নার কাজে ব্যাপক ব্যবহারের প্রচলন ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এর ঐতিহ্য হারাতে থাকে। বর্তমানে বাদামের তেল রমনীদের রূপচর্চা ও ঔষধিতে ব্যবহৃত হয়।

প্রসঙ্গত, সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে বিকল্প হিসেবে সম্প্রতি বাদাম তেল খাওয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর থেকেই বাদাম তেল নিয়ে চলছে হইচই।

"