নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১১ মে, ২০২২

একনেকে ৫৮২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৫ হাজার ৮২৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ের ১১টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন তিন হাজার ৯৬৩ কোটি ৩৮ লাখ, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন এক হাজার ২২০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক অর্থায়ন ৬৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভার কার্যক্রমে অংশ নেন।

পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, মহামারির দুঃসময় কাটিয়ে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি আবার ৭ শতাংশের ঘর অতিক্রম করতে যাচ্ছে বলে ধারণা দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের হিসাব ধরে প্রবৃদ্ধির এই প্রাক্কলন করেছে বিবিএস। তাতে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে স্থির মূল্যে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

সরকারি হিসাবে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর মহামারির ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে। এ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছিল। পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলন বলছে, বাজেটের ওই লক্ষ্যকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবারের প্রবৃদ্ধি।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে পৌঁছাবে, যা গত অর্থবছরে ২ হাজার ৫৯১ ডলার ছিল।

সাময়িক হিসাবে, অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট জিডিপি বেড়ে ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার হবে বলে প্রাক্কলন করেছে পরিসংখ্যান ব্যুরো।

একনেক সভায় সড়ক প্রশস্তকরণে দুটি প্রকল্প পাস হয়। প্রকল্প দুটি পাসের সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এটা সবার স্বীকৃত, প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, সড়কের ঘনত্ব বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ প্রতি বর্গকিলোমিটার আয়তনের অনুপাতে কতটুকু সড়ক আছে তা বাংলাদেশে বেশি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আর নতুন সড়ক বানানোর দিকে নজর না দিয়ে বিদ্যমান যে সড়ক রয়েছে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্ব দিতে হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা প্রচুর রোড করেছি, এখন মেইন টার্গেট হওয়া উচিত বিল্ডিংয়ের চেয়ে মেইনটেইনিং। যে সড়কগুলো আমরা বানিয়েছি সেগুলো সুরক্ষা দিতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে, আপগ্রেডিং করতে হবে, প্রশস্ত করতে হবে। নতুন নতুন সড়ক না বানিয়ে হাতের সড়কগুলোকে চালু রাখেন, ভালো করে রিপেয়ার করেন। আপাতত নতুন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনায় ব্রেক দেন।

একনেকে পাস হাওয়া সড়কের প্রকল্প হচ্ছে, ‘দিনাজপুর সড়ক বিভাগাধীন হিলি স্থলবন্দর-ডুগডুগি-ঘোড়াঘাট জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণসহ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিদ্যমান সরু-জরাজীর্ণ কালভার্টগুলো পুনর্নির্মাণ এবং বাজার অংশে রিজিড পেভমেন্ট ও ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অন্য প্রকল্প হচ্ছে, ‘শেরপুর (কানাসাখোলা)-ভীমগঞ্জ-নারায়ণখোলা-রামভদ্রপুর-পরানগঞ্জ-ময়মনসিংহ (রহমতপুর) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘বাপবিবো’র বিদ্যমান ৩৩/১১ কেভি পোল মাউন্টেড উপকেন্দ্রের নবায়ন ও আধুনিকায়ন (পর্যায়-১)’ প্রকল্প; ‘নেসকো এলাকায় স্মার্ট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম (Smart Distribution System) বাস্তবায়ন’ প্রকল্প; এবং ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্প।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রকল্প যথাক্রমে ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় স্থানীয় সরকারের পদক্ষেপ-এলওজিআইসি (Local Government Initiative on Climate Change-LoGIC) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প এবং ‘শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি, যশোর প্রতিষ্ঠাকরণ’ প্রকল্প।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াউতরা, বোলাই-শ্রীগাং নদীর অংশবিশেষ ও ইটনা উপজেলার ধনু নদী, নামাকুড়া নদী এবং অষ্টগ্রাম উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর অংশবিশেষের নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার’ প্রকল্প।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অস্ত্রাগার (১ম পর্যায়ে ৪০টি) নির্মাণ’ প্রকল্প।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১৪টি)’ প্রকল্প এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close