প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১০ মে, ২০২২

‘অশনি’র প্রভাবে উপকূলে ঝড়ো বাতাস-বৃষ্টি

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ এখন শক্তি বাড়িয়ে প্রবল রূপ নিয়েছে। এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় গতকাল সোমবার সকাল থেকে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে। উপকূলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ থাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ঘূর্ণিঝড় থেকে জনগণকে রক্ষায় সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, বরগুনার পাথরঘাটা ও পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :

সাতক্ষীরা : সিডর, আইলা, আম্পানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি সাতক্ষীরার উপকূলবাসী। এর মধ্যে আবার ধেয়ে আসছে ‘অশনি’ নামের আরেক ঘূর্ণিঝড়। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের বাসিন্দারা। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি এখন ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে রূপ নিয়েছে। এটি আঘাত হানলে বাঁধ ভেঙে আবারও এলাকা প্লাবিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন উপকূলবাসী।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনি বর্তমানে আমাদের উপকূল থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। বর্তমানে ২নং হুশিয়ারি সংকেত চলছে। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর প্রভাবে সকাল ১০টা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাশরুবা ফেরদৌস জানান, এরই মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করা হয়েছে। সভা থেকে সব উপজেলাকে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। সাতক্ষীরায় ৪৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার উপযোগী করার জন্য নিজ নিজ চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে ২ লাখ ১৬ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে। এর মধ্যে শুধু শ্যামনগরে ১৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে ১ লাখ ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়া যাবে।

উপকূলীয় বেড়িবাঁধের মধ্যে শ্যামনগরে ২৭টি, আশাশুনিতে ১৭টি ও কালিগঞ্জে ২৭টি পয়েন্টকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলো মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এসব কাজের তদারকি করছেন।

এছাড়া ৮৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে; যাতে দুর্যোগের সময় তা ব্যবহার করা যায়। এছাড়া দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুল বাছেদ জানান, তাদের কাছে বর্তমানে ৪ লাখ টাকা ও ১৬০ টন চাল রয়েছে। এরই মধ্যে অগ্রিম প্রস্তুতি হিসেবে শ্যামনগর উপজেলায় ১ লাখ টাকা অগ্রিম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

পাথরঘাটা (বরগুনা) : দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ??‘অশনি’ এখন শক্তি বাড়িয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকা পাথরঘাটায় সোমবার সকাল থেকে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি হচ্ছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ থাকায় আতঙ্কে উপকূলবাসী।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

??অশনির প্রভাবে উপকূলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। ভারী বৃষ্টির কারণে পরিপক্ব হয়ে ওঠা এসব ফসলের বেশির ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে মুগডাল, সূর্যমুখী, ভুট্টা, চিনাবাদাম, মরিচ, বোরো ধান, গ্রীষ্মকালীন সবজি, আম, কাঁঠাল ও লিচুর মতো ফলের ক্ষতির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, সমুদ্র উত্তাল হওয়ায় অধিকাংশ মাছধরা ট্রলার ঘাটে ফিরেছে। অনেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।

পটুয়াখালী : অশনির প্রভাবে সোমবার সকাল থেকে পটুয়াখালীতে বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী ৫ দিন পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস। পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। আকাশে মেঘের ঘনঘটা, বাতাসের চাপ কিছুটা বেড়েছে। পায়রাসহ সব বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভোর পৌনে ৫টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পটুয়াখালীতে ১৪ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার সকাল ৯টার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ২১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, রবিবার দুপুরে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুতিমূলক একটি সভা হয়েছে। ওই সভায় নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। তবে সংকেত তিন কিংবা চার ঘোষণা হলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) : ইন্দুরকানীতে ‘অশনি’র আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সোমবার উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম. মতিউর রহমানের সভাকক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এলজিইডি কর্মকর্তা লায়লা মিথুন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, ওসি এনামুল হক, জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা শিমুল বড়াল, সাংবাদিক মারুফুল ইসলাম প্রমুখ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, ১৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে উপজেলায় জনসংখ্যার তুলনায় আশ্রয়কেন্দ্র নেই।

ভোলা : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে ভোলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টা থেকেই জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সঙ্গে হালকা বাতাস বইছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও কৃষকেরা। খুব জরুরি কাজ ছাড়া অধিকাংশ মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা উত্তাল হয়ে উঠেছে। এতে নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ। ফলে আতংকিত হয়ে পড়েছেন উপকূলবাসী।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাবুল আখতার বলেন, ভোলা জেলায় ৩৫১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। এরই মধ্যে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। কোনো পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ আছে কিনা দেখার জন্য। আমাদের পর্যাপ্ত জিও টিউব মজুদ করে রাখা হয়েছে। কোথাও বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখনই সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close