গাজী শাহনেওয়াজ

  ১০ মে, ২০২২

আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে শিশু পরিবারের নিবাসীরা

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীন শিশু পরিবারের নিবাসীদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে এই কার্যক্রম। এতে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বাঁচতে হাতে-কলমে শিখিয়ে দক্ষ করা হচ্ছে অসহায় এসব শিশুকে। তাদের কর্মক্ষম করতে ১২ ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে।

এ ছাড়া নিবাসীর যেসব শিক্ষার্থী দুর্বল, লেখাপাড়ায় অমনোযোগী অথবা ওপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারে না, তাদের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তা ছাড়া শিশু পরিবারের এতিম শিশুদের শারীরিকভাবে সুঠাম রাখতে সরকার দফায় দফায় বাড়িয়েছে মাসিক বরাদ্দ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নথি পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, বর্তমান প্রযুক্তিবান্ধব সরকার। মানুষকে কর্মক্ষম করে গড়ে তুলতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। সমাজসেবার অধীন অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছে। সংসদীয় কমিটি কাজ করতে গিয়ে দেখেছে, অনেক শিশু পরিবারের নিবাসী লেখাপড়ায় অমনোযোগী এবং বারবার পরীক্ষা দিয়েও উত্তীর্ণ হতে পারছে না। এই দুর্বলতার কারণে এসব শিশু যাতে হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে, সেজন্য তাদের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

নথির তথ্য মতে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালিত সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসীদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। নিবাসের একজন শিশুও যাতে বাস্তব জীবনে সুযোগ-সুবিধার অভাবে শিক্ষা থেকে ঝরে না পড়ে, সেজন্য নানামুখী সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে সরকার ও সংস্থাগুলো।

শিশু নিবাসের যেসব শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় ভালো নয়, তাদের প্রতি যত্নশীল বেশি সরকার। এ লক্ষ্যে যারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী অথবা ওপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারে না তাদের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থী যত দিন কর্মক্ষম না হবে, তত দিন পর্যন্ত তাদের পাশে থাকবে সরকার।

এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক (ভোকেশনাল) শিক্ষায় নিয়োজিত নিবাসীদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসীদের হাতে-কলমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণভিত্তিক উৎপাদন কার্যক্রমের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাদের লক্ষ্য- একজন শিশু যাতে নিজেদের অসহায় ও অক্ষম না ভাবেন। সেজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সর্বদা শিশু পরিবার নিবাসীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। যত দিন তারা নিজেদেরই কর্মক্ষম ও কারিগরি শিক্ষায় যোগ্য মনে না করবে, তত দিন পর্যন্ত হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়ার পথ উন্মুক্ত রাখা রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন যুগোপযোগী কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে। এ ধরনের পাঁচটি প্রাক-বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এগুলো হচ্ছে রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও ও আজিমপুর, চাঁদপুরের বাবুরহাট, রাজশাহী ও বাগেরহাটের ফকিরহাটের মূলঘর।

এসব শিশু পরিবারের নিবাসীদের প্রযুক্তিনির্ভর কারিগরি ও হাতে-কলমে একডজন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণের ধরনসমূহ হচ্ছে, কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্কিল বাড়ানো, টাইপ ও শর্টহ্যান্ড, সেলাই ও এমব্রয়ডারি, উলবুনন, ব্লক-বাটিক অ্যান্ড স্কিন প্রিন্টিং, পোলট্রি অ্যান্ড ভেজিটেবল গার্ডেনিং, কার্পেন্ট্রি, হেয়ার ড্রেসার, ওয়েলডিং অ্যান্ড সিটমেটাল, ইলেকট্রিক ও হাউস ওয়্যারিং, ইলেকট্রনিকস, কমার্শিয়াল আর্ট, লেদার ওয়ার্কস এবং বাঁশ ও বেত।

এদিকে, দেশের ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবার এবং ৫টি প্রাক-বৃত্তিমূলক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার আলোকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলাম অনুসরণপূর্বক ট্রেডের মেয়াদ ও ধরণ নির্ধারণ, যুগোপযোগী এবং স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী ট্রেড নির্বাচন, দক্ষতাবৃদ্ধিকীকরণ এবং বিশেষ ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ের ভিত্তিতে দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ প্রদান।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, শিশু পরিবার ও নিবাসীদের পাশাপাশি এতিম শিশুদের জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। স্বাধীনতাণ্ডপূর্ব সময় থেকে এই কার্যক্রম চলে আসছে। বর্তমানে ব্যাপক বিস্তৃত হয়েছে এর ক্ষেত্র। ১৯৯১-৯২ সাল সারা দেশে ক্যাপিটাল গ্র্যান্টপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৫০টি এবং নিবাসী ছিল ৮ হাজার ৪৭৮ জন। আর জনপ্রতি অর্থ বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৬০ টাকা। ধাপে ধাপে এটা বেড়ে বর্তমানে একজন এতিম শিশুর ভরণপোষণের জন্য সরকারের মাসিক বরাদ্দ নির্ধারণ হয়েছে দুই হাজার টাকা। এ খরচের মধ্যে খাদ্যবাবদ ১ হাজার ৬০০ টাকা, পোশাক বাবদ ২০০ ও অন্যান্য খরচ ২০০ টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close